রংপুরের পীরগঞ্জে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি, গ্রাহকদের চরম ভোগান্তি!

রংপুরের পীরগঞ্জে টানা বেশ কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে ছোট-বড় হাট-বাজার থেকে শুরু করে ও সাধারণ গ্রামের মানুষও অতিষ্ঠ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে যেমন বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে, তেমনি কল-কারখানা, অফিস-আদালতের সরকারি কার্যক্রম, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়া ও চিকিৎসা সেবাসহ গরমে গ্রামের সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে নামাজের প্রায় প্রতি ওয়াক্তে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও ত্যক্ত-বিরক্ত।

সরেজমিন উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী, চৈত্রকোল, বড়দরগাহ্, ও কুমেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, প্রত্যহ গড়ে প্রায় ৫/৮ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। আর একবার চলে গেলে বিদ্যুৎ কখন আসবে তা বুঝা যায় না। গ্রাহকদের কোন পূর্বাভাস কিংবা প্রচারণা ছাড়াই রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ শঠিবাড়ি’র আওতায় ভেন্ডাবাড়ী সাব-জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা খেলছে মর্মে অভিযোগ করেছেন ভ‚ক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে ভীমশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহেল গালেব শিবলী বলেন, সরকারীভাবে যতটুকু জানি, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অপেক্ষা উৎপাদন ক্ষমতা বেশী। তাছাড়া এ সময় বিদ্যুতের উপর কোন বাড়তি চাপ নেই, তবুও কেন লোডশেডিং কিংবা বিদ্যুৎ বিভ্রাট?

রসুলপুর বাজারের ব্যবসায়ী মোকলেছার রহমান, সিরাজুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ৮ বার লোডশেডিং হয়। যখন যায় তখন এক থেকে দেড় ঘণ্টা আর বিদ্যুৎ আসে না। তারা জানান, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠবে।

গুর্জিপাড়া হাটের বিদ্যুৎ নির্ভর ওয়ার্কসোপ শ্রমিক মিজানুর রহমান, মানিক মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় কাজ-কর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আয়-রোজগার অর্ধেকে নেমেছে। পলাশবাড়ী গ্রামের গৃহবধু নাজমিন আক্তার বলেন, অসহনীয় গরমে রাতে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন স্বামী সন্তানদের নিয়ে ঘরের বাহিরে বের হতে হয়। অনেক সময় বিদ্যুতের এমন আচরণে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।

ভ‚ক্তভোগীদের অভিযোগ- বিদ্যুতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, জরাজীর্ণ অবকাঠামো আর পুরোনো লাইনের কারণে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা উৎপাদিত বিদ্যুতের সুফল পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ভেন্ডাবাড়ী সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মমিমুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে বলেন, এই সাব-জোনালের আওতায় মোট ৪৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। বিদ্যুৎ চাহিদা পিক-অফপিক মিলে ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। কিন্তু আমরা প্রতিদিন ঘাটতি পাচ্ছি ২/৩ মেগাওয়াট। ফলে কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে জানান, বড় পুকুরিয়ার ৪টি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমান ৩টি বিকল হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।