সিরাজগঞ্জের বেলকুচি মডেল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ পুনর্বহালে সংবাদ সম্মেলন

সিরাজগঞ্জ বেলকুচি উপজেলার বেলকুচি মডেল কলেজের গভর্নিং বডির অবৈধ সভাপতি হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট করায় মহামান্য হাইকোর্ট পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজাকে গভর্নিং বডির সভাপতি পদে পুনর্বহাল করায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন অত্র কলেজের গভর্নিং বডি।

সোমবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে বেলকুচি পৌর এলাকার বেলকুচি মডেল কলেজের আয়োজনে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে গভর্নিং বডির সভাপতি পদ পুনর্বহাল করায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেলকুচি মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীম মন্ডল। এসময় তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, অত্র বেলকুচি মডেল কলেজের গভর্ণিং বডির নিয়মিত কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হক রেজাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ১২ ফেব্রুয়ারী ২৪ ইং তারিখে পত্রের মাধ্যমে পরিবর্তন করে হাফিজুর রহমানকে গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন মহামান্য হাইকোর্ট।

এমতাবস্থায় ২৫ মার্চ ২৪ খিঃ থেকে সাজ্জাদুল হক রেজা স্বাভাবিক ভাবে সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করিতে পারিবেন। অপর দিকে অত্র বেলকুচি মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান সরকারের চাকুরীর মেয়াদ গত বছর ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে চাকরির মেয়াদ ষাট বছর পূর্তি হলে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সর্ব সম্মতিক্রমে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি

কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ অনুযায়ী যথাযথ বিধান অনুসরণ পূর্বক শামীম হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ০১ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ থেকে শামীম হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

শামীম হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গত ৩ মার্চ ২০২৪ দুপুরে সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান ৫০/৬০ জন্য উশৃংখল লোকজন নিয়ে বেআইনি ভাবে কলেজে প্রবেশ করে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীম হোসেনকে চেয়ার থেকে অত্র কলেজের শিক্ষক আল মামুন নিজে অবৈধ পন্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে নেন এবং নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলে দাবি করেন।

আল মামুন অবৈধ ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে দখল করায় ছাত্রছাত্রীসহ স্থানীয়রা ৬ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখে তারা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মিছিল করে। যাহা বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অত্র কলেজের শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয় এবং অত্র এলাকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

উল্লেখ্য যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ২ (i) (ii) এবং (iii) ধারা অনুযায়ী কোন কলেজের অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিষয় সমূহের মধ্য হইতে জেষ্ঠ্যতম পাঁচজন শিক্ষকের যে কোন একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে নিয়োগ দিতে হইবে।

এক্ষেত্রে মোঃ আল মামুনের ইসলামের ইতিহাস বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অধিভুক্ত নয়। তাই জনাব আল মামুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনি পরিপন্থি, এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতেও আল মামুন যে রেজুলেশনের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছেন, সেই রেজুলেশনে অত্র কলেজের পরিচালনা পর্ষদের মোট ১৩ সদস্যের মাত্র ৫ সদস্যের স্বাক্ষর রয়েছে।

কোন প্রকার পরিচালনা পর্ষদের সভাও করা হয়নি। সভাপতি হাফিজুর রহমান ফোন করে একজন করে ডেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পাঁচজনের স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষরিত বইটিও বাহির থেকে নেয়া। ১৩ সদস্যর মধ্যে পাঁচ সদস্যর স্বাক্ষরে কোন কোরাম হয় না। যাহা সম্পুর্ন বেআইনি এবং অবৈধ। আল মামুন স্বঘোষিত অধ্যক্ষ হওয়ার পরে কলেজের নামে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট থেকে সাত লক্ষ টাকা জাল জালিয়াতি করে কলেজের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং কলেজের তহবিল শুন্য করে ফেলেছেন।

এছাড়াও অধ্যক্ষ শামীম হোসেনকে না জানিয়ে আলমারি ও টেবিলের ড্রয়ার ভেঙ্গে রক্ষিত অত্র কলেজের ০৪ (চার)টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সমূহ তছনছ করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসমূহ সরিয়ে নিয়েছেন। অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার স্বার্থে আল মামুন কলেজের কর্মচারী, শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করেন।

তিনি বেলকুচি মডেল কলেজের এইচ.এস.সি (বি.এম) শাখার ছয় জন শিক্ষক/কর্মচারীর এমপিওভুক্ত করে দিবেন মর্মে অত্র কলেজের শিক্ষক আব্দুল বাতেনের নিকট তার ছোট ভাই খায়রুল বাসার বিএম শাখার প্রভাষকের নিকট এমপিও ভুক্তির জন্য গত ১০ এপ্রিল ২০২৩ সালে ১০ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবী করেন এবং টাকা না দিলে এমপিও বাতিল করা হবে বলে শিক্ষক আব্দুল বাতেনকে হুমকি প্রদান করেন।

একই কলেজের প্রভাষক আব্দুল লতিফকে ফোন করে ডেকে এনে এমপিওভূক্তির জন্য দেশ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবি করে এবং টাকা না দিলে এমপিও বাতিল করা হবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।

পরিচালনা পর্ষদ মনে করেন উল্লেখিত অপরাধ গুলো আল মামুন নিজে করেছেন এবং এরই প্রেক্ষিতে গতি ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে পরিচালনা পর্ষদের সর্বসম্মতিক্রমে উল্লেখিত অসদাচারণ ও নৈতিক স্খলনের জন্য জনাব আল মামুন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করেছেন মর্মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ১৭(ক) এর ১ এবং ৭ ধারা অনুযায়ী আল মামুনকে কেন সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হবে না, মর্মে আল মামুনকে একাধিক বার উকিল নোটিশ প্রদান করলেও তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি বলে তার লিখিত বক্তব্য উল্লেখ করেন।

উক্ত সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন গভর্নিং বডির সভাপতি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হোক রেজা, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীম হোসেন, সাবেক প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান সরকার, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য রেজাউল করিম, বিদ্যুৎসাহি সদস্য অমিতাভ কামাল, অত্র কলেজের শিক্ষক, কর্মচারীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ প্রমূখ।