সুনামগঞ্জের শাল্লার ঘটনার অন্তরালে ছিল জলমহাল ও গ্রাম্য রাজনীতি!

সুনামগঞ্জের শাল্লার হিন্দু গ্রামে হামলার ঘটনার অন্তরালে ছিল মুল কারণ জলমহাল নিয়ে বিরোধ ও গ্রাম্য রাজনীতি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীদের বেশির ভাগই আসে স্বাধীনের গ্রাম দিরাইয়ের নাচনি থেকে। স্বাধীন মেম্বারও হামলাকারীদের দলে ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই হামলা হয়। তার সাথে জলমহাল নিয়ে বিরোধের জেরে হেফাজত নেতার বক্তব্য ও পরবর্তী নোয়াগাঁও গ্রামের এক যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাস এর জেরে পরিকল্পিতভাবে নোয়াগাঁওয়ের হিন্দু পল্লীতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

ঘটনার মুল হোতা স্বাধীন অবশ্য নিজ থেকেই পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণের ইচ্ছাপোষণ করেছিলেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

শনিবার (২০ মার্চ) ভোরে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার একটি পল্লী থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেফতার করে।

তবে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করে জানানো হয়েছে, হামলার কারণ হিসেবে ‘জলমহাল নিয়ে বিরোধ’ ও ‘স্থানীয় রাজনীতিসহ নানা ইস্যুসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন স্বাধীন মেম্বার। ২০ মার্চ শনিবার দুপুরে শাল্লা পুলিশের হাতে তাকে হস্তান্তর করে পিবিআই। শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লার পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামে। তিনি দিরাই’র শরমঙ্গল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য। যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম স্বাধীন (স্বাধীন মেম্বার) গ্রেফতারের পর শনিবার (২০ মার্চ) বেলা ১১টায় পিবিআই সিলেটের কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করেন পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদ উজ জামান।

ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী স্বাধীন মেম্বার। তিনি বলেন, হামলাকারীরা সবমিলিয়ে ৯৭ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পিবিআই তার প্রতি নজর রাখছিলো। এরপর মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। পিবিআইয়ের একটি বিশেষ টিম কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের বুড়াবুইয়ি গ্রাম থেকে স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেফতার করে।
এ দিকে জানা যায় স্বাধীন মেম্বার পুলিশে কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, তার মধ্যে জলমহালের বিষয়টিও আছে। তবে আদালতের মাধ্যমে ২১ মার্চ ১০ রিমান্ড আবেদন করে শাল্লা থানা পুলিশ।

১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর থেকেই হামলাকারী হিসেবে ওঠে আসে স্বাধীন মেম্বারের নাম। হামলার পরদিন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার চন্দনের দায়েরকৃত মামলায়ও স্বাধীন মেম্বারকে আসামি করা হয়। শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লার পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।

অন্যদিকে হিন্দু গ্রামে হামলার পিছনে সরকারদলীয় স্থানীয় রাজনীতি থাকতে পারে বলে অনেকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। হামলার পর হেফাজতের মাহফিলের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সমাবেশের কিছু ছবিতে দেখা গেছে, মঞ্চে উপস্থিত আছেন দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায়। তিনি সমাবেশে বক্তৃতাও দেন। ঐ সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ দিন থেকে দিরাই শাল্লার রাজনীতিতে চলছে নানা মেরুকরণে। দিরাই পৌর নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়েও ছিলো বহিষ্কার-বিদ্রোহী খেলা। হেফাজতের মাহফিলে স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি ও প্রতিপক্ষ গ্রুপের ষড়যন্ত্র’ এবং সমাবেশে হেফাজত নেতাদের হুমকি ধমকিও হতে পারে হিন্দু গ্রামে হামলার কারণ। সূত্র জানিয়েছে, এ সকল বিষয়কে সামনে রেখে হিন্দু গ্রামে হামলার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা যায়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নোয়াগাঁওয়ের এক যুবক। এই স্ট্যাটাসের জেরে হিন্দু-অধ্যুষিত ওই গ্রামটিতে হামলা চালিয়ে ৯৫টিরও বেশি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এদিকে মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করায় নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে আরও বেশি স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।