খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি, বিকল্প স্থানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ১৪৪ ধারা স্থানীয় প্রশাসনের জারির পর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পরিবর্তে স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিলের স্থান পরিবর্তন করে খাগড়াছড়ি শহরের কলাবাগানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৮ এপ্রিল) ভোর থেকে সেখানে নতুন করে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। অপর দিকে বাস টার্মিনাল এলাকা এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বাস টার্মিনাল এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জেলা বিএনপি জেলা শহরের ৪টি স্থানে আবেদন করেও অনুমতি না পেয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় ইফতার মাহফিলের প্রস্তুুতি নেয় বিএনপি। কিন্তু তার পাশে জাতীয় শ্রমিকলীগ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও তার আশ-পাশ এলাকায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৪ধারা জারি করে। ফলে শনিবার ভোরে জেলা বিএনপির হুট করে স্থান পরিবর্তন করে ইফতার মাহফিল শহরের কলাবাগান এলাকায় নিয়ে আসে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার কর্মসূচির জন্য স্থান বরাদ্দ পেতে জেলা প্রশাসকের কাছে জেলা বিএনপি শহরের চারটি স্থানে অনুমতি চাইলেও প্রশাসনের অনুমতি মিলেনি। বরং জেলা বিএনপির আবেদনের ৬দিন পর বিএনপির আবেদিত খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পৌর আওয়ামীলীগ পাল্টা শান্তি সমাবেশের কথা বলে আবেদন করার পরও তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। এ অবস্থায় জেলা বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ব্যক্তি মালিকাধীন জমি বেছে নেয়। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে বিএনপির ইফতার মাহফিল স্থলে জাতীয় শ্রমিকলীগ খাগড়াছড়ি পৌর শাখার উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ ও ইফতার বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মর্মে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বাস টার্মিনাল সন্নিকটস্থ মাঠ ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জেলা প্রশাসন শুক্রবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও আশপাশ এলাকায় ১৪৪ধারা জারি করে।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইঁয়া বলেন, যেকোন মূল্যে খাগড়াছড়িতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল হবে। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। তিনি সরকারি দল ও প্রশাসনের ইফতার বানচালের ষড়যন্ত্রের কারণে বিএনপির অন্তত ১০লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।

এদিকে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে ইফতার মাহফিলে বাঁধা দিলে ১২ ও ১৩ই এপ্রিল সড়ক অবরোধ কর্মসূচি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জেলা বিএনপি। গত শুক্রবার সকালে ১১টায় কলাবাগানস্থ বৈঠকে জেলা বিএনপি‘র সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষনা করেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি‘র সভাপতি ওয়াদুদ ভুইয়া। শনিবার খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল হওয়ার কথা রয়েছে। তাতে বিএনপি‘র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

তবে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুইয়া অভিযোগ করেন, ইফতার মাহফিল কর্মসূচির অনুমতি নিয়ে প্রশাসন তালবাহানা করেছে। কর্মসুচি বাঞ্চাল করতে গত রাতে পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হানা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি নেতা প্রবীন চন্দ্র চাকমা, আবু ইউছুপ চৌধুরী, এমএন আবছারসহ জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার(৭ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়িতে আয়োজতি সাংবাদিক সম্মেলনে শনিবার(৮ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল বানচাল করা হলে ১২ ও ১৩ এপ্রিল জেলায় সড়ক অবরোধের হুশিয়ারি দেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইঁয়া।

উল্লেখ্য সদর উপজেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সন্নিকটস্থ মাঠে বিএনপি ও পৌর শ্রমিকলীগের পাল্টা-পাল্টি ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে ১৪৪ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো: সহিদুজ্জামান। গত শুক্রবার(৭ই এপ্রিল) জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো: সহিদুজ্জামান এক লিখিত আদেশে বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বাসটার্মিনাল সন্নিকটস্থ মাঠ ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধকল্পে এবং জেলার সার্বিক আইন শৃক্সখলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে উল্লেখিত স্থানে আগামী ৮ই এপ্রিল ২০২৩ সকাল ৮টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৯৮এর ১৪৪ধারা মতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

মাহফিল ও সমাবেশ চলাকালিন কতিপয় ব্যক্তি একত্রে মিলিত হয়ে উক্ত স্থানে শান্তি শৃক্সখলা বিঘ্ন সৃষ্টি করে আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে এই আদেশ জারি করা হয়।