ঠাকুরগাঁওয়ে এসপিজি অ্যাপের নামে প্রতারণা: কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারক ফিরোজ

এবার এসপিজি ওয়ার্ল্ড নামে অ্যাপে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের এক গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ।

লাভের আশায় গিয়ে ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে এই প্রতারক চক্র। এতে যাঁরা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁরা এখন হাহুতাশ করছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, রাতারাতি বড়লোক হওয়া, অস্বচ্ছল্পতা দূর করা, গাড়ী, বাড়ী ও মোবাইল ফোন পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এসপিজি অ্যাপের কথিত সিও স্কুলের পিয়ন ফিরোজ আলম এলাকার শিক্ষার্থী, বেকার যুবকদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এসপিজি অ্যাকাউন্ট খুলে দেন।
অ্যাকাউন্ট খোলার পর বিভিন্ন প্যাকেজে বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হতো।

বিভিন্ন প্যাকেজ ক্যাটাগরিতে যে যত বেশি টাকা দিবে তার আয় ততো বেশি হবে। তার জন্য কাজ করতে হবে টিকটকের কিছু ভিডিও স্ক্রনশর্ট নিয়ে তাদের গ্রুপে দিতে হবে।
সাথে সাথে তাদের একাউন্টে টাকা যোগ হবে। এভাবে একেক জন মানুষ সুদের উপর টাকা ও ঋণ নিয়ে, গরু, ছাগল বিক্রি করে ১২ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলেন। একাউন্টে হাজার হাজার টাকা থাকলেও। হঠাৎ করেই অ্যাকাউন্ট থেকে তারা আর টাকা তুলতে পারছিলেন না। প্রতারণা করে তাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এসপিজির কথিত সিও ফিরোজ আলম।

এমন প্রতারণার ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৬ নং আউলিয়ার ইউনিয়নের কচুবাড়ী হাট নামক এলাকায়।
প্রতারণক ফিরোজ আলম ঐ গ্রামের মোহাম্মদ দানি এর ছেলে।
সে ৬১ নং কচুবাড়ী উপরপরী হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাম প্রহরী।

গ্রাহকদের ট্রেডিং থেকে উপার্জন এবং অর্থ পরিশোধের কথা বলে অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের অবিশ্বাস্য সহজ পথে অর্থ আয়ের আমন্ত্রণ জানায় এসপিজি অ্যাপ। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে প্রায় সব ব্যবহারকারীর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক দেখানো শুরু করে অ্যাপটি।

পুনরায় একাউন্ট চালু করতে চাইলে গ্রাহকদের কাছে আরও টাকা চাওয়া হয়। এই ঘটনার পর থেকে প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা ফিরোজ আলম এর বাড়ীতে অবস্থান নিলে পরিবারের লোকেরা বাড়ীতে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম বলেন, এসপিজি মাধ্যমে অনেক টাকা আয় করা যাচ্ছে। এখানে রাতারাতি বড়লোক হতে পারবা এই সব প্রলোভন দেখিয়ে ফিরোজ আলম আমাকে একাউন্ট খুলে দেয়। আমি মানুষের কাছে হাওলাত করে নিয়ে প্রথমে ১২ হাজার ও পরে আরও ১৫ হাজার টাকা দেই। একাউন্টে ৭০ হাজার টাকা দেখালেও সেই টাকা তুলে পারতেছি না।

গার্মেন্টসকর্মী বলেন, আমি ঢাকায় থাকি আমার এলাকা থেকে বলে এসপিজি একাউন্ট খুললে ঘরে বসে থেকে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করা যাবে। সেই প্রলোভনে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসায় এসে ফিরোজের কাছে একাউন্ট খুলে নেই। এখন আমার টাকাও নেই, চাকরিও নেই। এখন ফকির হয়ে গেলাম।

আরেক ভুক্তভোগী বেকার যুবক কৃষ্ণ বলেন, ফিরোজ ভাই আমাকে বলে একটা লিংক দিচ্ছি। এখান থেকে অনেক টাকা কামাইতে পারবি রাতারাতি বড়লোক হবি। আমি মানুষের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হাওলাত করে নিয়ে তাকে দেই। পরে একদিন কচুবাড়ী স্কুলে মিটিংয়ে আমাদের চাল, ডাল দেয়। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে গেলে টাকা উত্তোলন হয় না। তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, পরে শুনি সে বাড়ী থেকে পালিয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এই টাকা কীভাবে আমি পরিশোধ করবো। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ী আলামিন জানান, আমি বাজারের মধ্যে মাংস বিক্রি করি। অনেক আমার কাছ থেকে মাংস বাকি নিয়ে গেছে। বলে যে অনলাইন থেকে টাকা তুলে টাকা পরিশোধ দিবে। এখন কেউ আর টাকা দেয় না।

জানা যায়, ফিরোজ একটি চক্র তৈরী করে স্থানীয় বেকার যুবক ও শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ১ হাজার গ্রাহকের কাছে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে।

৬১ নং কচুবাড়ী উপরপরী হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মুক্তা রানী সেন জানান, স্কুলের দাপ্তরিক ফিরোজ এর প্রতারণার বিষয় আমরা জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমাদের শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ফিরোজ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠো ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, অনলাইন অ্যাপে প্রতারণা বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে সেই প্রতারকের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার, উত্তম প্রসাদ পাঠক জানান, এই প্রতারক চক্রটি গ্রামের সহজ সরল মানুষদের টার্গেট করে প্রতারণা করে আসতেছে। বিভিন্ন জায়গায় এই প্রতারক চক্রটি গড়ে উঠেছে কিছু দিন কিছু টাকা লাভ দিয়ে পরে স্বর্বশান্ত করে ফেলে। এই চক্রটিকে ধরতে আমাদের এডিশনাল এসপি ক্রাইম কাজ করতেছে। এই বিষয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
এই প্রতারক চক্রটি ধরতে আমরা সকলের কাছে সহযোগিতা চাই।