পার্বত্য জেলা বান্দরবানে অপহৃত ৭ বম পাড়াবাসীকে গুলি করে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত ৭জন বম পাড়াবাসীকে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

শুক্রবার(৭ই এপ্রিল ২০২৩) ইউপিডিএফ’র সহসভাপতি নতুন কুমার চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে উক্ত ঘটনাকে ঠান্ডা মাথার গণহত্যা অভিহিত করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ গোষ্ঠী তাদের মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনীর সন্ত্রাসীদের দিয়ে ‘দুই পক্ষের গোলাগুলি’র নাটক সাজিয়ে অপহৃত উক্ত ৭জন জনকে হত্যা করেছে। অবশ্য পুলিশ ৮জনের লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে নতুন কুমার চাকমা স্থানীয় সূত্রের বরাতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার সময় নব্যমুখোশ ও সংস্কারপন্থী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি- পিসিজেএসএস’র ২০-২৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী জুরভারাং পাড়ায় প্রবেশ করে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পাড়াবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে সন্ত্রাসীরা একে একে পাড়ার ২২জন ধরে বেঁধে রাখে। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিকক্ষার্থী ও কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীও রেহাই পায়নি। এ সময় সন্ত্রাসীরা ৭৫বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

পরে সন্ত্রাসীরা উক্ত ২২জনকে অস্ত্রের মুখে খামতাং পাড়ায় নিয়ে গিয়ে সেখানে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্দি করে রাখে। এরপর সেখান থেকে ১৫জনকে ছেড়ে দিলেও বাকী ৭জনকে ছেড়ে না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে।

হত্যার শিকার হওয়া ৭জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- ১.ভান দু বম, ২. সাং খুম, ৩.সান ফির থাং বম, ৪. বয় রেম বম ৫. জাহিম বম, ৬. লাল লিয়ান ঙাক বম ও ৭.লাল ঠা জার বম। এর মধ্যে ৬জন জুরভারাং পাড়ার ও ১জন পানখিয়াং পাড়ার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

বিবৃতিতে তিনি উক্ত ঘটনায় এলাকার লোকজন ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা সদরে আশ্রয় নিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, কেএনএফ’ নামধারী একটি গোষ্ঠিকে দমনের নামে গত বছর অক্টোবর মাস থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় “কম্বিং অপারেশন” পরিচালনা করছে। কিন্তু কেএনএফকে দমন করতে না পেরে সাধারণ বম পাড়াবাসীদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতনসহ নানা অত্যাচার সংঘটিত করা হচ্ছে এখন আবার সশস্ত্র সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে খুন, গুম, অপহরণ করা হচ্ছে।

এর ফলে শত শত বম জাতিগোষ্ঠীর লোক ভারতের মিজোরামে ও বান্দরেবানের বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো সাধারণ বম পাড়াবাসীরা নিরাপদে বসবাস করতে পারছেন না। এতে করে ওই এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

ইউপিডিএফ নেতা বিবৃতিতে অবিলম্বে উক্ত হত্যাকান্ডের নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং অপারেশনের নামে সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধের দাবি জানান। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্মাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এর আগে বান্দরবা‌নের রোয়াংছ‌ড়ির খামতাম পাড়ার কা‌ছে ২জন পাহাড়ী সশস্ত্র গ্রুপের গোলাগু‌লি‌তে ৮জন নিহত হ‌য়ে‌ছে। শুক্রবার(৭ই এপ্রিল) সকা‌লের দি‌কে রোয়াংছ‌ড়ির খামতাম পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘ‌টে। এদের ম‌ধ্যে ৭জ‌নের নাম জানা গে‌ছে, তারা হল, ভান দু বম, সাং খুম, সান ফির থাং বম, বয় রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান ঙাক বম ও লাল ঠা জার বম।

প্রশাসন সূত্র জানায়, সকা‌লে গোলাগু‌লির শব্দ শোনা যায়। প‌রে‌ সেখা‌নে গি‌য়ে ৮জ‌নের গু‌লি‌বিদ্ধ মৃত‌দেহ দেখ‌তে পে‌য়ে পু‌লিশ‌কে খবর দেয়। প‌রে পু‌লিশ ঘটনাস্থলে গি‌য়ে লাশ উদ্ধার ক‌রে।

বান্দরবান রোয়াংছ‌ড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, রোয়াংছ‌ড়ি খামতাম পাড়া এলাকা থে‌কে সেনা পোশাক প‌রি‌হিত ৮জ‌নের গু‌লি‌বিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়ে‌ছে। তা‌দের বান্দরবান সদর হাসপাতাল ম‌র্গে আনা হ‌চ্ছে। ত‌বে কে বা কারা তা‌দের মে‌রে‌ছে তা জানা যায়‌নি। মৃত‌দেহ কোন গ্রুপের তাও বলা যা‌চ্ছেনা।