রংপুরের পীরগঞ্জে অস্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণহীন কাঁচা বাজার!

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম বেঁধে দেয়া হলেও প্রায় ১ মাসেও তা বাজারে কার্যকর হয়নি। নির্ধারিত দামে এসব পন্য তো মিলছেই না, উল্টো পাইকারী বাজারে ৫ থেকে ১০ টাকা, কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, এর আগেও চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু বাজারে তা কার্যকর হয়নি। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারিও ছিলনা বললেই চলে। বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু, ডিম ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর হচ্ছেনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর মূল্য ২৬ থেকে ২৭ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা।

সরেজমিন পীরগঞ্জ সদরসহ ভেন্ডাবাড়ী, গুর্জিপাড়া, শানেরহাট, খালাশপীর, রসুলপুর, মাদারগঞ্জ হাট ঘুরে জানা যায়, আলু- ৬০/৬৫ টাকা, পিঁয়াজ- ১২০, সিম- ১০০, ওল কচু- ৫০, মুলা- ৩০/৩৫, কাঁচা মরিচ- ১২০, শুট মরিচ কেজি- ৪৫০, আদা- ২৮০, রসুন- ২৪০, করলা- ৬০, পোটল- ৪০, বেগুন- ৪০, টমেটো- ১২০, ফুল কপি- ৫০, পাতা কপি- ৪০, শশা- ৪০, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি- ৬০, লাউ প্রতি পিচ- ৪০, পেঁপে- ২৫, শাক প্রতি আঁটি ১০ টাকা। ডিম প্রতিটি- ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভেন্ডাবাড়ী হাটে কাঁচা বাজার করতে আসা অনেকের মধ্যে দানিসনগর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক শাহজাহান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কাক ডাকা ভোর হতে সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনমজুরি পাই সাড়ে ৪’শ হতে ৫’শ টাকা। সংসারে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়েসহ ৭জন সদস্য। ছেলে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ বাদেই দিলাম। প্রত্যহ ৩বেলা ভাতের জন্য চাল লাগে প্রায় ৪ কেজি (২’শ টাকা)। বাকি টাকায় ঊর্ধ্বগতির অস্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণহীন কাঁচা বাজারে গিয়ে কি কি কেনা সম্ভব?

প্রশ্ন করে শাহজাহান মিয়া অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, মাছ, মাংস হাটিতে নাইবা গেলাম। কিন্তু যদি কোন দৈব কারণে কিংবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজে বেরুতে না পারি হয় উপোষ নতুবা ধার-দেনায় বাঁচতে হবে। কিন্তু ধার-দেনা পরিশোধ করবো কি করে? শাহজানের মতই একই অবস্থা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর। তাই, এহেন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কঠোর নজদারীতে স্বস্তি ফিরতে পারে এমনই ধারণা করছে বিজ্ঞমহল।