মাদারীপুরের কুমার নদী দখল করে নদী বিক্রির চেষ্টা চেয়ারম্যানের, প্লট করে বিক্রি করেছেন খাল

মাদারীপুরের মস্তফাপুরে কুমার নদী দখল করে প্লট আকারে বিক্রি চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগ সোহরাব হোসেন খান নামে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বে এই চেয়ারম্যান পাশের একটি খাল দখল করে নিয়ে শতাধিক দোকান ঘর নির্মাণ করে বিক্রি করেছেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভূমি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত পত্র পাঠিয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ৫০ নং চতুরপাড়া মৌজার বি.আর.এস ১ নং খতিয়ানে ৬৩৪ নং দাগের জমি খাল হিসেবে শ্রেণীভুক্ত রয়েছে। তবে এসএ রেকর্ডে দেখা যায় এটি কুমার নদী। এই নদীর উপর পশ্চিম পাশেই রয়েছে একটি ব্রিজ ও পূর্ব পাশে আছে সুইচগেট। সুইচগেট ও ব্রিজের মাঝখানের জায়গায় বিপুল পরিমান জমি শুস্ক মৌসুমে পানি থাকে না তবে বর্ষ মৌসুমে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। সেই জমির চার দিক দিয়ে ২০ থেকে ২৫ ফুট চওড়া বাঁধ দিয়ে মাটি ফেলে স্থানীয় চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান এটিকে দখল করে নিয়েছেন। এরই পাশে দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানায়, চেয়ারম্যান জায়গাটি প্রথমে দখলে নিতে মাটি ফেলছে। পরবর্তীতে জায়গাটি প্লট আকারে বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তাই তিনি নদীটির চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করেছেন। এর আগে পাশের খাল দখল করে তিনি বিক্রি করেছেন। সেখানে রয়েছে শতাধিক দোকানঘর। খালের উপরেই গড়ে উঠেছে বাজার।

অভিযোগের বিষয়ে মস্তফাপুর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান বলেন, ওই জায়গাটি অনাবাদি। তাছাড়া ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ হয়ে থাকায় ওই জায়গাটিতে মাদকসেবীরা আড্ডা দেয়। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রেজুলেশন করে জায়গাটা পরিষ্কার করে সবজি চাষ করার জন্য উপযোগী করেছি। খাল দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওটা আমরা দখল করিনি অন্যলোকে দখল করেছে। আমাদের দখলে আছে মাত্র ৭৫ ফুট।

স্থানীয় বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, এই চেয়ারম্যান কয়েক বছর আগে একটি খাল দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করেছেন। সেখানে গড়ে উঠেছে দোকান ঘর, বাজার। এখন তিনি কুমার নদীতে বাঁধ দিয়েছে। সুযোগ পেলে এটাও তিনি প্লট আকারে বিক্রি করবেন।

সরকারি সম্পত্তি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে মস্তফাপুর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আলেয়া আকতার বলেন, দখল করা ওই অংশটি সরকারি সম্পত্তি। বিষয়টি নজরে আসার পরে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসিল্যান্ড স্যারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। খাল দখলের বিষয় তিনি বলেন, এটা অনেক আগের ঘটনা। আমি এখানে যোগদান করার আগেই দখল হয়েছে। শুনেছি ওটা নিয়ে মামলা চলছে।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, একজন ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি সম্পত্তি দখল করে ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারে না। খাস জমির দেখভাল করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। জেলা প্রশাসকের উচিত দ্রুত জায়গাটির দখল মুক্ত করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, আমরা সংবাদ পেয়েছি মস্তফাপুর ইউনিয়নের কুমার নদী দখল করে ভরাট করার চেষ্টা চলছে। আমরা এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দিয়েছি সরেজমিনে গিয়ে নদীর ম্যাপ অনুযায়ী যে অংশটি দখল হয়েছে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে। তাছাড়া সরকারি সম্পত্তি কারো দখল করার সুযোগ নেই। সকলের দায়িত্ব সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার। যদি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি সরকারি সম্পত্তি দখল করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।