সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ এম এ হান্নানের ১৭তম মৃত্যবার্ষিকী

শুক্রবার (২৪ জুন) বিশিষ্ট সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি এম এ হান্নানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৫ সালের এই দিনে ঢাকা থেকে গৌরীপুর আসার পথে ত্রিশালের কালহর নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।

এম এ হান্নানের বাবার নাম হাজী মোঃ বদর উদ্দিন ও মাতা-মিসেস হালিমা খাতুন। ১৯৬৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানাধীন শ্যামগঞ্জ ইউনিয়নের সাতপাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নওপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সনে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ মিছিলে যোগদানের মধ্যদিয়ে তার ছাত্ররাজনীতিতে হাতেখড়ি। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে ঢাকা থেকে স্নাতক শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি জাপানে পাড়ি জমান।

হান্নান ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন প্রতিবাদী ও পরোপকারী। জাপানে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি তিনি অটোমোবাইল ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৬ সনে দেশে ফিরে গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। তার কোম্পানির নাম কসমো ক্যাব ও কসমো অটোমোবাইল।

পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম ট্যাক্সিক্যাব কসমো ক্যাব (প্রাঃ) লিঃ নামে ঢাকা এবং চট্রগ্রামে ট্যাক্সিক্যাব সেবা চালু করে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে গাজীপুরে তিনি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান কসমো সুয়েটার লিঃ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি তার নিজ এলাকায় অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও মসজিদে দান, অনুদানের পাশাপাশি তিনি শিক্ষায় অবহেলিত মেয়েদের শিক্ষার উন্নয়নে শ্যামগঞ্জে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মইলাকান্দায় এক একর জমি ক্রয় করেন। যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।

তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ সৈনিক। খেলাধুলার উন্নয়ন্নে গৌরীপুরে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন তিনি।

১৯৯৬ সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ এলাকা গৌরীপুরের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীর ওপর নির্যাতন নিপীড়ন শুরু হলে তিনি সর্বোতভাবে দলের পাশে দাঁড়ান।

২০০২ সালে ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ হলে বিএনপি জোট সরকারের সাজানো মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী মুক্তির দাবিতে তিনি বিশেষ ভুমিকা রাখেন। গৌরীপুরে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক গনজোয়ার সৃষ্টিতে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখেন হান্নান। গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনে ২০০৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আয়োজন করেন এবং নিজে সভাপতি প্রার্থী হন। মরহুম স্বাস্থ প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকিরকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে তিনি কার্যকরী সদস্য ছিলেন।

এ ছাড়া তিনি ঢাকার উত্তরা ক্লাবের সদস্য ছিলেন। শামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য ছিলেন। তার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ শ্যামগঞ্জ থেকে নওপাই-লামাপাড়া হয়ে গৌরীপুরের রাস্তাটি তার নামে নামকরণ করা হয়। ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ এটির ফলক উন্মোচন করেছেন।

মরহুম এম এ হান্নানের অবর্তমানে তারই সহোদর ছোটভাই তরুন শিল্পপতি আওয়ামীলীগ নেতা এম এ মামুন গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক ও সামাজিক সকল কর্মকান্ডে সক্রিয় ভুমিকা রাখছেন।