সম্প্রীতির অনন্য নির্দশন একই আঙিনায় মন্দির, মসজিদ

পৃথিবীটা মানুষের হোক,ধর্ম থাকুক অন্তরে,মসজিদে আজান হোক,ঘন্টা বাজুক মন্দিরে।” এই পঙতিমালার বাস্তবরুপ যেনো রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা চত্বর এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধর্মীয় উপাসনায় দুটি। একই আঙিনায় দুই ধর্মের দুই উপাসনালয় মসজিদ ও মন্দির। প্রায় কয়েক যুগ থেকে এ দুটি উপাসনালয়ে উপাসনা করে আসছেন হিন্দু ও মুসলমান ধর্মালম্বীরা।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নির্দশন বহন করছে মিঠাপুকুর উপজেলা চত্বরের মডেল মসজিদ সংলগ্ন আদিদেব মন্দির। মিঠাপুকুর উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণের কারণে একটু আদিদেব মন্দির দক্ষিণ পশ্চিমে সরে গেলেও আঙিনা ও স্থান অভিন্ন। তবে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মন্দির ও মসজিদটি শতবছর থেকে একই আঙিনায় যার যার ধর্ম পালন করে আসছে।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ, যার অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে। লালমনিরহাট জেলা শহরের পুরান বাজার এলাকায় অবস্থিত পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির এবং রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মডেল মসজিদ ও আদিদেব মন্দির একটি ধর্মীয় ঐতিহাসিক নির্দশন বলে অভিহিত করেছেন আগত দর্শনার্থীরা।

রংপুরের মিঠাপুকুর জামায়াত শিবির অর্ধুষিত এলাকা। বিগত সময়ে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত তার একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে দলটি রাজনীতিতে চমক সৃষ্টি করেছিলো। এবারেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত শিবির সমর্থিত চেয়ারম্যানদের ছিলো জয়জয়কার। জামায়াতের কেন্দ্রীয় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দায়ে দন্ডিত” বিশেষ করে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রাণনাশের ঘটনা ঘটলেও সম্প্রীতির বন্ধন অটুট ছিলো। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা মেরে সাত জন নিহতের ঘটনা ঘটলেও মিঠাপুকুর উপজেলা চত্বরে অবস্থিত একই আঙিনায় আদিদেব মন্দির এবং মসজিদ নিয়ে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, বরং যুগের পর যুগ চলে আসছে সম্প্রীতির অনন্য এক নির্দশন। একই আঙিনায় অবস্থিত মসজিদ ও মন্দিরে নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

হানাহানি ও মতবিরোধ ছাড়াই যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় আচার পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষ। প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এটি দেখতে আসে অনেক মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় , মিঠাপুকুরে একই গেইটের ভিতর দিয়ে স্ব-স্ব ধর্মের অনুসারীরা প্রবেশ করছেন। হিন্দু ধর্মালম্বীরা দিচ্ছেন পূজা, মুসলমানেরা আজান দিয়ে নামাজ পড়ছেন। নামাজের সময় মাইক,সাউন্ড, উলুধ্বণি বন্ধ থাকছে। ঠিক লালমনিরহাট সদরের পুরান বাজার জামে মসজিদ সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। মসজিদ-মন্দিরসংলগ্ন খোলা জায়গাটিতে পূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মেলা বসে।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার, মোঃ রকিবুল হাসান জানান, আমি মিঠাপুকুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করার আগে এক আঙিনায় মসজিদ মন্দির এমনটা জেনেছি। সম্প্রীতির এমন নজির সত্যিই মনোমুগ্ধকর। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা দ্বারা সর্বক্ষণিক আমরা তদারকি করছি। কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি ও পুরোহিত বলেন, মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নেওয়া হয় কখন এবং কীভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে। এরই অংশ হিসেবে নামাজের সময়গুলোতে মন্দিরে বন্ধ থাকে ঢাকের বাদ্য বাজনা।

মিঠাপুকুর মডেল মসজিদের ইমাম, হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আখিরুজ্জামান আজাদী জানান, আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই। আমরা আমাদের ধর্ম পালন করে যাচ্ছি। তারা তাদের ধর্ম পালন করে যাচ্ছে। পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম জানান, পাশাপাশি মন্দির থাকায় কোনো সমস্যা নেই এবং মিলেমিশে যে যার যার মতো ধর্ম পালন করা হচ্ছে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, এখানে যে যার ধর্ম পালন করছেন। শতবছর থেকে এমন সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য নিদর্শন এবং দর্শনীয় স্থান। যাহা বাংলাদেশে সম্প্রীতির অনন্য এক নির্দশন হিসেবে নজির স্থাপন করেছে।