রংপুরের পীরগঞ্জে পীরগঞ্জে নদী খনন কাজ বন্ধ

রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগের ভিত্তিতে নলেয়া নদী খনন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) শানেরহাট ইউনিয়নের দামোদরপুরে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে ওই নদী পুন: খনন কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, উপজেলার শানেরহাট ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে শান নদী ও নলেয়া নদী প্রবাহিত হচ্ছে শত বছর ধরে। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খনন না করায় এক সময় ভরাট হয়ে যায়। মওকা বুঝে স্থানীয় লোকজন এটি দখলে নিয়ে চাষাবাদ করে আসছে। ইতিমধ্যে ওই জমির রেকর্ডও হয়েছে দখলদারদের নামে।

এদিকে নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে নদী সংলগ্ন ও আশপাশ এলাকার হাজার হাজার একর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। এলাকার কৃষকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ওই নদীর ১৫ কি.মি এলাকা খননের জন্য দরপত্র আহŸান পুর্বক কয়েকজন ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়।

সপ্তাহখানেক আগে নদীটিতে খননকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খনন কাজ শুরু করলে নদীর জলকর স্থানে শুধু মাত্র শুস্ক মওসুমে চাষাবাদ করা বেশকিছু মানুষ খনন কাজে আপত্তি জানিয়ে তাদের জমির ক্ষতিপুরনের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তদন্তে গিয়ে স্থানীয়য কৃষকদের দাবির মুখে নদী খনন কাজ সাময়ীক বন্ধ করে দেন।

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ধল্লাকান্দি গ্রামের আবুল হোসেন প্রধান, পাহাড়পুরের রফিক আমিন, পার্বতীপুরের পেয়ারা খাতুন, রিজু খান, দামোদরপুরের খোকন মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের সাথে।
তারা জানান, ৬২ সালের কাগজপত্র অনুযায়ী আমরা জমির মালিক। এক সময় নদী ছিল কি না আমরা জানি না। বর্তমানে সেখানে নদী না থাকলেও আমাদের জমি কেটে নদী করা হচ্ছে। শানেরহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবেদ হোসেন মাজু খান মাজু বলেন, পার্বতীপুর মৌজার ৬২৮ দাগে শান নদীর নামে খাস জমি রয়েছে। অন্য কোন মৌজায় নদী বা নালার নামে জমি নেই। আর আমার সাড়ে ৩ বিঘা জমি নদীতে রয়েছে বলে খনন করা হচ্ছে।

তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বলেন, নদী খননে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে আমাদেরকে ক্ষতিপুরন দেয়া হোক।

অপরদিকে দামোদরপুরের অতুল চন্দ্র, পাহাড়পুরের আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, হামরা এই নদী (নলেয়া) দিয়া এক সময়ে নৌকা চলাচল করা দেখেছি। সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এই নদী দিয়ে নৌকাতে পাট বোঝাই করে নিয়ে গেছেন। অথচ নদীর তলদেশের জমি যারা চাষাবাদ করেন তারা দাবি করছেন এখানে নাকি কোন দিনই নদী ছিল না। ওই নদীতে ৭’শ মিটার খনন কাজ পেয়েছেন বিশিষ্ট ঠিকাদার জাহিদুল ইসলাম রুবেল। তিনি বলেন, আমরা ঠিকাদাররা কাজ পাওয়ার পর সরকার থেকে জি.ও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) দেয়া হয়েছে। আমাদের খনন কাজ বন্ধ করতে আবারও জি.ও দিতে হবে। নইলে এই খনন কাজ বন্ধ করা যাবে না।

উপজেলা সকারী কমিশনার (ভুমি) খাইরুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমি বড় পাহাড়পুরে নলেয়া নদী খনন কাজ তদন্ত করি। ওই নদীর অস্তিত্ব নিয়ে এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকায় অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আমি খনন কাজ আপাততঃ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।