পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়

৫ গ্রামের হাজারো মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ঝুকিপূর্ণ ভাসমান সেতু

‘মাঝে মধ্যে বই খাতা নিয়ে পানিতে পরে যাই, সেদিন আর গন্তব্যে যাওয়া হয় না। আবার কখনো এতটা ভয় লাগে যে একজনার সাহায্য নিয়ে নড়বড়ে সেতুটি পার হতে হয়। বিকল্প পথ না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের এ সেতুটি পার হতে হয়।’ -বুক ভরা নিঃশ্বাস নিয়ে কথা গুলো বলছিলেন একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী নিপা আক্তার।

কৃষক সুলতানের অভিযোগ- ‘সেতুটির নাজুক অবস্থার কারণে ছোট পরিবহনে তুলেও ফসল বাজারে নেয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে মাথায় করে বস্তা বহন করতে হয়। অনেক সময়ই তা নদীতে পরে যাচ্ছে।’

কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউপির পাখিমারা খালের উপর স্থানীয় কৃষদের অর্থায়নে নির্মিত ভাসমান সেতু পারাপারে দুর্দশার চিত্র এভাবেই বর্ণনা করেন ভুক্তভোগীরা।

২০২০ সালের ৬ আগস্ট রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে জীর্ণ দশায় থাকা সেতুটি খালের মধ্যে ভেঙে পরে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে কৃষি পল্লী খ্যাত নীলগঞ্জ ইউপির ৫ গ্রামের ১০ হাজার মানুষের। কোন উপায়ান্ত না পেয়ে ওই বছরই অক্টোবর মাসে স্থানীয় কৃষক ও সাধরণ মানুষ ২ লাখ ৩৭ টাকা চাঁদা তুলে তাদের অর্থায়নেই নির্মান করেন একটি ভাসমান সেতু। প্লাষ্টিকের ড্রাম , নাইলনের দড়ি ও কাঠের পাটাতন দিয়ে ১১৬ মিটার এ সেতুটি নির্মান করেন তারা। তবে নির্মানের ২ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন সংস্কার না হওয়ায় বতর্মানে সেতুটি ঝুকিপূর্ণ অস্থায় রয়েছে। নড়বড়ে এ সেতুর অনেক স্থানেই কাঠ ভেঙে গেছে।
এছাড়া অনেক ড্রাম ফুটো হয়ে পানি প্রবেশের ফলে বেশ কয়েকটি যায়গা দেবে গেছে। ফলে সেতু পারাপার হতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন স্কুল কলেজ পড়ৃয়া শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারিরা।

সব চেয়ে ঝুকির মধ্যেও গর্ভবতী মায়েদের আনা নেয়ার জন্য এখন একমাত্র বাহন হয়ে দাড়িয়েছে নৌকা।

কুমিরমারা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, ‘আমাদের গ্রামে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এই সেতুর অভাবে এসব মালামাল পরিবহন করতে হয় মাথায় করে।’

শতাধিক পথচারিদের অভিযোগ- ‘বর্তমানে এই সেতু দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছে। ছেলে মেয়েরা ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না। এক কথায় আমরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি।’

তবে এতোকিছুর পরেও কেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এই সেতুটি নির্মানে পদক্ষেপ নিচ্ছে না তা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানান প্রশ্ন।

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মহর আলী জানান, ‘সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পরই উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশে নতুন গার্ডার বিজ্র নির্মানের লক্ষে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিলো। দীর্ঘ দিনেও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমানে আবার নতুন করে সাপোর্টিং বিজ্র প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবনা পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’