চুয়াডাঙ্গায় দোয়েল-কোয়েল-ময়না থাকলেও থাকলো না টিয়া

চুয়াডাঙ্গায় একসাথে দোয়েল— কোয়েল—ময়না টিয়া’র জন্ম হওয়ার ঘটনায় সাড়া ফেলেছিল খবরটি। তবে মাহবুব—কল্পনা দম্পতির যমজ দিলারা জামান দোয়েল, করবি জাহান কোয়েল, মাইশা মাহিন ময়না ও তানিশা তাসিন টিয়াদের জন্ম হলেও ২ মাস পর মৃত্যু হলো টিয়ার।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মাহবুবের শিশুকন্যা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নিহত টিয়ার প্রতিবেশী আক্তারুজ্জামান জানান, গত ঈদুল আজহার পর নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয় টিয়া। এরপর মাঝে মাঝে অসুস্থ হয় আবার সুস্থ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় পরিবারের লোকজন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

টিয়ার বাবা মাহাবুল জানান, আমার মেয়েগুলোকে দেখার জন্য শশুর বাড়ির লোকজনেরা আকুল হয়ে ছিল। তাই সেই আবদার রাখতে কোরবানি ঈদের চারদিন আগে গত ২৫শে জুন রবিবার দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়াকে নিয়ে মেয়ের মা ও আমি তাদের নানির বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ঈদের তৃতীয় দিন টিয়ার শরীরে ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক দেরি না করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান মিলন ডাক্তারকে দেখায়। এরপর আবারও শশুর বাড়িতে রেখে আমি বাড়িতে চলে আসি। আমি বাচ্চারগুলোর দুধ নিয়ে নিয়মিত দেখতে যাই। ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল টিয়ার। বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হলে আমাকে কল দেয়। সাথে সাথে দেরি না করে আমি গিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় টিয়া। এরপর লাশ গ্রামের বাড়ি বিষ্ণুপুর দক্ষিণ পাড়ায় নিজ বাড়িতে আনা হয়।

ইউএনও স্যারের জানিয়েছিলাম তিনি দাফন সম্পন্ন করার অনুমতি দিয়েছিলেন। বাদ মাগরিব বিষ্ণুপুর দক্ষিণ পাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা জানান, একসঙ্গে জন্ম নেওয়া চার কন্যা দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়ার মধ্যে টিয়া মারা গেছে। সন্ধার পর নিহতের দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

উল্লেখ্য, কল্পনা খাতুন (২৮) নামের এক গৃহবধূ মঙ্গলবার (০৯ মে) রাতে চুয়াডাঙ্গা অঁাখিতারা জেনারেল ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার গর্ভে থেকে ভূমিষ্ঠ হয় জমজ চার কন্যা সন্তান। তাদের সংসারে নাঈম নামে ১০বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে, জমজ চার কন্যা সন্তান হওয়ায় বাবা—মাসহ তাদের পুরো পরিবার খুশি হলেও জীবনযাত্রা নিয়ে নানা চিন্তায় পড়েন পরিবারটি। তিনি দরিদ্র হওয়ায় ক্লিনিকের বিল মেটানোর মতো সামর্থ্য ছিল না তাদের। চার জমজ শিশুর বাবা দিনমজুর মাহবুবুর রহমান।

তিনি সেসময় আরও বলেন, আমাদের মত গরীবের ঘরে চার জমজ কন্যা সন্তানের জন্ম হলে সেসময় যা টাকা ছিল সিজার অপারেশন করার আগে ওষুধপাতি ও বিভিন্ন সামগ্রী কিনতেই সব শেষ হয়ে যায়। ক্লিনিকের বিল ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। এখন বড় চিন্তায় পড়ে যায় টিয়ার বাবা মাহবুব। তার স্ত্রী কল্পনা খাতুনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। রক্ত জোগাড় করতেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় পরিবার থেকে।

অঁাখি তারা জেনারেল হাসপাতালে স্বত্বাধিকারী ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চার কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। নবজাতক চার শিশুসহ মা সুস্থ রয়েছে। প্রসূতির রক্তরক্ষণ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, চার কন্যাসন্তান হাসপাতাল তত্ত্ববধায়নে আছে। তারা কিছুটা অপুষ্ট। অক্সিজেন ছাড়াই বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। তাদের মায়ের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় বলে চিকিৎসক বলেন। তিনি আরও বলেন, এর আগেও জমজ বাচ্চা দেখেছি। একসঙ্গে তিনটা বাচ্চা জন্মগ্রহণ কমবেশি দেখা ও শোনা যায়। তবে একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম খুবই কম জন্ম হয় বলে জানান ডাক্তার মাহবুবুর রহমান মিলন।

এদিকে, (৯ মে) গরীবের ঘরে একসঙ্গে যমজ চার কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় তাদেরকে দেখতে যান জেলা প্রশাসন আমিনুল ইসলাম খাঁন। বুধবার (১০ মে) ওই ক্লিনিকে দেখতে যান এবং যমজ শিশুদের নাম রাখেন জেলা প্রশাসক। সেসময় তাদেরকে ফুলদিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করাসহ মিষ্টিমুক করানো হয়।

সেইসাথে গরীব পরিবারের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বিনামূল্যে প্রদান করার জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানান জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান। পরে দম্পতির অনুরোধে (দোয়েল কোয়েল ময়না ও টিয়া) নামকরণ করে জমজ চার কন্যা শিশুর নাম রাখেন জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খাঁন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক অস্ত্রেপচারের মাধ্যমে চার জমজ কন্যা সন্তানকে গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ করান। তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে এক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসন থেকে প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।