চুয়াডাঙ্গায় মাসের আগেই ফুরিয়ে যাচ্ছে একমাসের ইনকাম! চোখেমুখে হতাশা

পবিত্র রমজান মাস মানেই মুসলিম ধর্মের অন্যতম দিন। বারো মাস আমরা যেভাবেই চলি না কেন-এ দিনে কম বেশি ধর্মীয় কাজের প্রতি আলাদা অনুভূতি তৈরী হয় মানুষের। অবশ্য রমজান মাসজুড়েই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে যোগ হয় একটু বাড়তি খরচের হিসাবও।

তবুও মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি হয়নি সংসারে। ঠিক এভাবেই পিছনের দিনগুলো চলে আসলেও বর্তমানে তার উল্টোটা তৈরী হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়।
দেশে আর্থিক সঙ্কটসহ বিভিন্ন অস্থিরতার কারণে নিত্যপণ্যসহ সকল দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে বন্যার পানির মতো। তবে বন্যার পানি অল্পসময়ের মধ্যে কমে গেলেও বছর বছরেও নিয়ন্ত্রণে আসে না নিত্যপণ্যের বাজার।

তবে দেশ ও দশের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে সরকারের। এতে একপ্রকার রাষ্ট্রের ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয় বলে বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে এমনটি জানিয়েছে।

এদিকে, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার একাধারে তিনবার ক্ষমতা পার করে চতুর্থবারের দেশ পরিচালনায় বসেছে। তবুও দেশে মহাসঙ্কটের দেখা দিয়েছে। বাজারে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থায় নেই সাধারণ মানুষের। আয়ের সাথে ব্যয়ের পাল্লা ভারি হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের দামের চাপে আটকে গেছে সাধারণ মানুষের গলা।

একেকটা দিন পার হলেও কাটছে না উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, চোখেমুখে শুধু হতাশার ছাপ জন্ম নিয়েছে। যা এর আগে এমনটি হয়নি বলে জানিয়েছে ভোক্তারা। সেইসাথে আশঙ্কার মধ্যদিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে সংশয়ের পথও। সংসার চালানোর চিত্রটাও যেনো দুর্ভিক্ষের পথে হেঁটে চলেছে।
এদিকে, নিন্ম ও মধ্যবিত্তের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ১৫/২০ দিন যেতে না যেতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে একমাসের আয়। আর এ কারণে বেশিরভাগ পরিবারে নেমে এসেছে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার আশা।

এদিকে, সাধারণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থে রাষ্ট্রের প্রধান অংশ হিসেবে সিন্ডিকেটরদের ভারে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে সরকারের। কিন্তু কোনো প্রকার কারণ ছাড়া একটা রাষ্ট্রের সরকার কখনই কারো কাছে হার মানতে পারে না। যা এই সচেতনযুগের মানুষের কাছে ভালোভাবে স্পষ্টতা রয়েছে।

এদিকে, রমজানের মাসের শুরুতে জেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিংয়ে গেলে কোনো লাভ হয়নি তাতে। যে কারণে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্সের কথা নির্বাচনী ইসতেহারে উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে বারবার। আর সে কারণে প্রশাসনের চোখ যখন বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই অসাধু ব্যবসায়ীরা সকল দ্রব্যমূল্য সরকার নির্ধারণের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করছে।

এতে করে সরকার ব্যবসায়ী কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ভোক্তাগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবসময়। যা সরকারের প্রতিশ্রুতি পদেপদেই বিফল যাচ্ছে। যে চ্যালেঞ্জ সরকার করেছিল তা কোনোটাই রোজার দিনক্ষণ কমতে থাকলেও পিছিয়ে নেই চাল, ডাল, তেল, আটাসহ রমজানের সকল ভোগ্যপণ্যের দাম। আর সেলক্ষ্যেই দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের উদ্বেগী পরিবেশ তৈরী করেছে চুয়াডাঙ্গার অসাধু ব্যবসায়ীরা।

যা কৃষিনির্ভর জেলা হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করলেও কার্যকরী কোনো ফলাফল আসেনি ভোক্তাদের পক্ষে। বর্তমানে রমজান মাস চললেও সেই আগের মতই ন্যূনতম অভিযানেই ন্যস্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

কিন্তু জরিমানার পরিমাণ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে সামান্য এবং শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় যেমনী ব্যবসায়ীরা জরিমানা দিতে প্রস্তুত রয়েছে তেমনী প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভোক্তারা।

এ বিষয়ে বাজারে আসা ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কঠোর আইন পাসের মাধ্যমে দোকানে সিলগালা জেল-জরিমানা, বাধ্যতামূলক করলে ঠিকই সিন্ডিকেটরদের রাজত্ব শেষ হবে বলে মনে করছেন চুয়াডাঙ্গার সচেতন জনগোষ্ঠীরা। তবে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া ভোক্তাদের বাঁচানো সম্ভব নয় বলে মনে করছে সচেতন ও শান্তিপ্রিয় মানুষ।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের কৌশল আর সরকারের নড়চড় থাকলেও কার্যকরী পদক্ষেপহীনতায় সরকারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণায় ঘুষ দুর্নীতি জিরো টলারেন্সসহ দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করলেও এখনও পর্যন্ত বাজারের স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি।

এদিকে, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক দামে সংসার চালানোই যেখানে পরিবারের কর্তারা মাথার চুল টানছে। সেখানে সন্তানের লেখাপড়া করানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। যা দেশ ও জাতির জন্য ভয়ংকর বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অথচ সরকার বারবারই উন্নয়ন নিয়েই পড়ে আছে। মানুষ যদি ভালো নাইই থাকে তাহলে দেশের উন্নয়নে কখনই কাজে আসবে না বলে মনে করছেন চুয়াডাঙ্গার সচেতন মহল।

রমজানকে ঘিরে বাজারে নিত্যপণ্যের মধ্যে কিছু কিছু শাকসবজি তুলনামূলক থাকলেও নেই চাল, ডাল, তেল, আটাসহ রোজার পণ্য ছোলা, মসুরী, খেজুর, বেসন, পেঁয়াজ, আলু বেগুনসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দামে অস্থিরতার জাল বুনেছে বাজার। সে হিসেবে শুধু রমজান মাসই নয় বারোমাসই ভোক্তাদের আয়ের কথা চিন্তা করে দ্রব্যমূল্যের দাম ২০১৯ সালের বাজারে পরিণত করার জোর পরিকল্পনা তৈরী করা ছাড়া ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার শঙ্কায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গাবাসী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছর একই প্রক্রিয়ায় মূল্য কারসাজি করে ক্রেতাকে ঠকাচ্ছেন। তবে এর কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় না। পাশাপাশি ভোক্তাকে স্বস্তিতে রাখতে তদারকি সংস্থাগুলোর কোনো গবেষণা নেই। নেই কোনো বাজার তদারকির পরিকল্পনা। ফলে বছরের পর বছর সেই চেনা মুখ বাজারে ভোক্তার অস্বস্তি বাড়ছে।

বাজার করতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমি সরকারী চাকরী করি। প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। এতেও প্রতিমাসের ৫ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবী জাহিদ হাসান বলেন, তিনি বেসরকারী একটা প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন এবং অন্য আরেকটা ছোট্ট ব্যবসা করি। তা দিয়ে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকার মতো মোট আয় করি।

এতে করে পরিবারে ৪ সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে মাসের আগেই আয় করা টাকা ১৫-২০ দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সন্তানদের লেখাপড়া আর বাকী দিনগুলো চালাতে গরীবের ভবিষ্যতের স য় ভেঙে চলতে হচ্ছে। যদি এমন অবস্থা চলতে থাকে ভবিষ্যতে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।