চুয়াডাঙ্গায় মেম্বারের ঘর থেকে উদ্ধার হলো ‘গরীবের টিসিবি পণ্য’

সারা দেশসহ চুয়ডাঙ্গায় যখন নিত্যপণ্যসহ সকল জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে ঠিক সেসময় মানুষের মাঝের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর হতাশায় বিভর হয়ে রয়েছে। যা বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থও হচ্ছে বার বার। যে কারণে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে গরীব নিম্নবিত্তদের মাঝে। অবশ্য মধ্যবিত্তরাও সামিল হয়েছে এই টিসিবির পণ্যে নেয়ায়। অথচ সেই গরীবের টিসিবির পণ্য ভুয়া নামে কার্ড তৈরি করে পণ্য আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জীবননগরের মনোহরপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে।

তিনি দুঃস্থ অসহায় ও গরীবের আস্থার প্রতীক টিসিবি পণ্য নিজের বাড়িতে লাট মেরেছে। এমন ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে সংবাদ সংগ্রহ করতে যায় তিন সাংবাদিক। সেসময় ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ ও তার ভাই তরিকুল ইসলাম তরির নেতৃত্বে ওই তিন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায়। সেসময় তাদের ক্যামেরা ও মোবাইল ভাংচুরের চেষ্টা চালানো হয়।

আহতরা হলেন—মাইটিভি ও স্থানীয় দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রতিনিধি মিঠুন মাহমুদ, দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিনিধি আজিজুর রহমান ডাবলু ও দৈনিক গ্রামের কাগজের প্রতিনিধি তুহিনুজ্জামান তুহিন।

এ ঘটনায় সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে গোপনে কৌশল অবলম্বন করে অন্য মানুষের ভুয়া নাম ব্যবহারে কার্ড তৈরি করে টিসিবির পণ্য আত্মসাৎ করে আসছেন। তিনি স¤প্রতি বেশ কয়েকজনের টিসিবির পণ্য তুলে বাড়ি নিয়ে গেছেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এর সত্যতা নিশ্চিতে ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে অনুসন্ধানে যান উপজেলার তিন সাংবাদিক। সেসময় নিজের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিকদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায় ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদসহ তার স্বজনরা।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক মিঠুন মাহমুদ বলেন, সচিত্র প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমি, সাংবাদিক এআর ডাবলু ও তুহিন আব্দুর রশিদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞাসার একপর্যায়ে আব্দুর রশিদের স্ত্রী বলেন, তার স্বামী টিসিবির পণ্য রান্না ঘরে এনে রেখেছেন। আমরা সেখানে টিসিবির দুই বস্তা চাল আর কিছু টিসিবির তেল দেখতে পাই। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়েই ইউপি সদস্য আব্দুর ক্ষিপ্ত হয়ে অশালীন ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন। একপর্যায়ে আব্দুর রশিদ তার ভাই তরিকুল ইসলাম তরির নেতৃত্বে আব্দুর রশিদের ছেলে আমির হামজা অঙ্কন, মৃত মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে হাসিবুর রহমান সুমনসহ আরও ৪—৫ জন আমাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় আমাদের কাছ থেকে ক্যামেরা ভাঙচুর করে। মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ারও চেষ্টা করেন।

তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, টিসিবির পল্য ডিলারদের কাছ থেকে অনেকজন তেল, ডাল নিলেও চাল নেননি। আমি সেখান থেকে দুই বস্তা চাল কিনে এনেছিলাম এলাকার গরিব মানুষের দেয়ার জন্য। আমি বাইরে কাজে থাকার কারণে চাল বিতরণ করতে দেরি হয়েছে। আমার বাড়ি কোনো তেল ছিল না।

মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি এখনো শোনেনি। তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। আর জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ বলেন, আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানালাম। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এই হামলার প্রতিবাদে আজ (২৯ মার্চ) শুক্রবার জরুরি সভার ডাক দিয়েছে জীবননগর সাংবাদিক সমিতি।