ব্যর্থ ঈদ উপহারে চুয়াডাঙ্গাবাসী

ঈদ মানেই কিন্তু আনন্দ, ঈদ মানেই সকল বিভেদ ভুলে মানুষের মিলনে আবদ্ধ, ঈদ মানেই আত্মতৃপ্তির ধর্মীয় সুখ। আর যাইহোক সামাজিক অনেক অনুষ্ঠান বাদ দিতে পারলেও ঈদুল ফিতরের উৎসব পালন করা থেকে আমাদের বাদ হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

হাজার হোক এটা আমাদের প্রাণের ধর্মীয় উৎসব। আমরা এ উৎসব মিস করতে চাই না কেউই। আবার করাটা সমুচীনও হবে না। তাই জীবনযাপন যেমনই যাক-প্রতি বছরই আমরা সবাই এই আনন্দের অপেক্ষায় থাকি। সারা বছর পার করলেও কিন্তু ঈদের এই একটা দিন সবচেয়ে মহামূল্যবান হয়ে ওঠে আমাদের সমাজে।

এই দিনটার জন্য আমরা অনেকেই আছি যারা দিন এনে দিন খায়-তারাও কিন্তু ঈদের একটু নতুন পোশাক ভালো ভালো খাবার খেতে ইচ্ছা করে না-এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল ব্যাপারও বটে। ধর্মীয় এ ঈদুল ফিতরের উৎসব একদিনের জন্য হলেও আনন্দ উপভোগে ডুবে যায় আমরা। মনে হয় যত যতন যেনো সব এই উৎসবে।
ধর্ম বলে কথা-ধর্মীয় উৎসব পালন করতে মন কারই বা না চায়।

সাংসারিক নানা জটিলতা থাকলেও ধর্মীয় উৎসব লুকাতে পারেনা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। মানুষের আয়ের উৎস যাইহোক ঈদ উৎসব পালন করাটা বিশেষ করে বাঙালির জন্য এক অন্যন্য ব্যাপার।

কিন্তু আর যায় হোক রোজা শুরু হলেই স্বাভাবিক থেকে কিছুটা হলেও বাজারঘাটে দোকানপাটে মানুষের একটু বাড়তি চাপ থাকেই। কিন্তু এবার তার ভিন্নতাই দেখা যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবা ১৫ রোজা শেষ হলেও বাজারঘাট নিত্যপণ্যের বাজারসহ পোশাকের দোকানে ঈদের ভিড় ঈদের মতো কিন্তু মনে হচ্ছে না আমাদের।
তবে সেই সুপ্ত মনের ঈদের আনন্দ উপভোগ এবার চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্য নিরামিশ হয়ে উঠেছে।

পিছনের বছরগুলোতে করোনার মহা কষাঘাত সহ্য করেও মানুষ কিন্তু ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ভুল করেনি। রোজার শুরু থেকেই ঈদের একটা আনন্দ মানুষের মনের মধ্যে দোল দেয়ই। আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে ঈদ আনন্দের একটা অনুভূতি লেগে থাকে আমাদের মুখে মুখে। এক মাস রোজা রাখার মধ্যদিয়েই শুরু হয় মানুষের নতুন পোশাক কেনার ধুম। চুয়াডাঙ্গার মেইন শহর বড়বাজার শহরের নিউ মার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে শপিংমলগুলো।

অবশ্য প্রতিবছরই ৮/১০টা রোজা শেষ হলেই আমরা দেখেছি সড়কপথসহ প্রতিটি মার্কেটে কমবেশি ভিড়ের মধ্যেই ঈদের গন্ধ বাতাসের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছে। মনের মধ্যেও যেন ঈদের সুখ টান দেয়। কিন্তু এবার তা বেশিরভাগই উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার মার্কেটগুলোতে। সড়কেও তেমন একটা নেই মানুষের ভিড়। যানবাহনগুলো স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে শহরসহ বাইরে।

যার আসল কারণ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক দাম। শুধুমাত্র ভাত খেতেই সংসারের হাল ভেঙে যাচ্ছে আমাদের। তারপরও সন্তানদের লেখাপড়া আর হঠাৎ বিপদের কথা না হয় বাদই দিলাম। এসব পার করাই যেখানে অসাধ্য ব্যাপার সেখানে ঈদের নতুন পোশাক কিনে ঈদ করাটা আমাদের জন্য এখনকঠিন অসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছে এবং তা অবশ্যই রাষ্ট্র অব্যবস্থাপনার কারণেই যত প্রভাব সব আমাদের ওপরই।

বর্তমানে দেশ মহাআর্থিক সঙ্কটসহ নানা সঙ্কটের মধ্যে স্থিরতা বিরাজ করছে। যার প্রভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষ পড়েছে বিপাকে। এই মফস্বল শহরে মানুষের আয় না বাড়লেও বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যসহ সকল প্রকার দ্রব্যের দাম এবং তা পদে পদে বেড়ে ওঠা। গরীব নি¤œমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও আজ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় চলার অবস্থাও হারিয়ে ফেলেছে। যার সর্বদোষ বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে। রাষ্ট্র আজ মানুষের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। মানুষের বেঁচে থাকাটাও যুদ্ধ করার মতো হয়ে উঠেছে।

এমনকি পিছনের দিনগুলোতে অভাব অনটনে থাকলেও কষ্ট করে হলেও কৌশলে কষ্ট করে হলেও ঈদের যে আনন্দ। সেই উপভোগ কোনোভাবেই ভুলতে পারিনি আমরা। ধর্মীয় উৎসব মানেই বড় উৎসব মুসলমানের। এটা উপভোগ না করতে পারাটা যে জাতির জন্য কতবড় ধাক্কা-গভীরভাবে ভাবলেই তা অবোঝার হবে না। তবে সকল দায় সরকারের রয়েছে। দেশ সঠিক পন্থায় পরিচালনা না হওয়ার ফলেই আজ সাধারণ মানুষের ঘরে অভাব ঢুকে বাসাবেঁধেছে।

গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশ চালিয়েও এবার ২০ বছরের ঘরে ক্ষমতায় এসেছে। তবে এতো সময় ধরে দেশ পরিচালনার পরও মানুষের অভাব দূর হয়নি। বরং আগের থেকে বেড়েছে। সরকার শুধু দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ঝুঁকেছে মানুষের কল্যাণে নয়। একটা কথা ছোট শিশুও বোঝে-দেশ কখনই মানুষের উপরে হতে পারে না।

আগে মানুষের উন্নয়ন তারপর দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন। অথচ একথা কী আমরা বুঝে যেন বুঝি না। এদিকে মানুষের কষ্টের দারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি আমরা অথচ সরকার মানুষের জীবনের কথা না ভেবে উন্নয়ন নিয়ে পড়ে আছে। যা আমাদের কোনোভাবেই বোধগম্য নয়।

মানুষ এখন চাপা ক্ষোভ নিয়ে জীবন চালাচ্ছে। একাধারে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এমন দুর্বিষহ জীবন উপহার পাওয়া জাতির জন্য শুধু লজ্জার নয় দুঃখজনকও বটে। তেমনী সরকারের ব্যর্থতা চোখে পড়েছে আমাদের।

এতো বছর ক্ষমতায় থেকে যদি টক ফল উপহার দেয় সরকার। তাহলে আগামীতে এর থেকেও যে ফল বেশি টক হবে না তারও কিন্তু গ্যারান্টি বা আস্থা দিতে পারেনি সরকার।

২০২৪ সালের রোজা শুরু হয়েছে ১২ মার্চ থেকে আজ ২৭ মার্চ অর্থ্যাৎ ১৫টি রোজা পার হয়েছে। অথচ সে অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার নিত্যপণ্যের বাজারঘাটে স্বাভাবিক ভিড় থাকলেও নেই পোশাক স্যান্ডেলের দোকানে। সেখানেও হাজারো দোকানের মধ্যে কিছু কিছু পোশাকের দোকান কিছু স্যান্ডেলের দোকান কিছুটা ভিড় দেখা যাচ্ছে। যা ঈদ মৌসুমে কাম্য ব্যবসায়ীদের। অথচ বিগত ঈদগুলোতে বাস্তব উদাহরণের অংশ হিসেবে আমরা দেখেছি-যখন দেশে করোনার মহামারী ধুমছে চলছে রাস্তায় বের হওয়া নিষেধ ব্যবসা বাণিজ্যও বন্ধ।

মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম আতঙ্ক ছুটে চলেছে। ঘুরে বেড়ানোর বিভিন্ন পার্ক বিনোদন জায়গাগুলো প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ করা হয়। ঈদ বলে কথা বাইরে বের হওয়া যেনো চোর পুলিশের মতো অবস্থা তৈরী হয়। সেই আতঙ্কিত সময়ের মধ্যেও মুসলমান ধর্মের শান্তিপ্রিয় মানুষ ঈদের আনন্দ ছোটছুটি আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়ানোও ভুল করেনি। কেউই আটকাতে পারেনি ঈদের নতুন পোশাক পরে আনন্দ উপভোগ করার।

যত সমস্যায় হোক না কেন-আমাদের ঈদের আনন্দ থেমে থাকেনি। হাজারো সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েও তবুও ঈদ পালন করেছি। কিন্তু এখন চেষ্টা করেও ঈদের আনন্দ উপভোগ করার মতো অবস্থা মানুষের এখন নেই। দেশে আর্থিক সঙ্কট সকল প্রকার দ্রব্যের দাম অসহনীয়পর্যায়ে অর্থ্যাৎ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

এখন হাজার চেষ্টা করেও ঈদ উৎসব পালন করতে নতুন পোশাক কেনার অবস্থাও তেমন একটা নেই আমাদের। যে কারণে আজ ১৫ রোজা হয়ে গেলেও চুয়াডাঙ্গায় নেই কোনো ঈদের ছোঁয়া, নেই মুসলিম ধর্মের রোজা ঈদের আত্মতৃপ্তি। আসল কথা হলো সবকিছুর মূলে যে দেশে অর্থ সঙ্কট হয় সেদেশের মানুষ অচল হয়ে যায়। যেটাই বলি না কেন-চুয়াডাঙ্গায় রোজা চলাকালীন অবস্থায় মানুষের মধ্যে কথাবার্তায় সুখের আভাস ঈদের আনন্দ বয়ে গেছে সবসময়।

কিন্তু এবার দেশ মহাসঙ্কটে পড়েছে যা গত ১৫ বছর একাধারে দেশ চালিয়েও অভাব এবং একপ্রকার চাপা দুর্ভিক্ষ চলছে নিন্মমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ঘরে। আর অসহায়দের কথা তো বলার নেই। এদেশে গরীব ধনী লোকের বৈষম্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকার যে পথে হেঁটে চলেছে সেপথে শুধু ধনীরাই আরও ধনী হবে আর গরীব নি¤œমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলো দিন দিন তলিয়েই যাবে এবং যাচ্ছেও।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছে, গত বছর ১০ রোজা পার হলেই বাজারঘাটসহ পোশাকের দোকানগুলোতে ঈদের ভিড় দেখা গেছে। কিন্তু এবার সেই সময় পার হলেও ঈদের ঢেউ ওঠেনি এখনও। এ নিয়ে পোশাক ব্যবসায়ীরা চিন্তিত রয়েছে। যা সবই দেশের কর্মফলের কারণে। তবে যতটুকু দেখা যাচ্ছে, পোশাকের দামও অনেক বেশি।