রংপুরের মিঠাপুকুরে কিশোরের রহস্যজনক মৃত্যু

রংপুরের মিঠাপুকুরে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় নয়ন চন্দ্র রায় (১৫) নামে এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার(২১ সেপ্টেম্বর) উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের ব‍েড়া পাড়া(রায় পাড়া) এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে জাম্বুরা গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত নয়ন চন্দ্র রায় উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের ব‍েড়া পাড়া(রায় পাড়া) গ্রামের শ্রী- হিরু চন্দ্র রায়ের ছেলে।

স্থানীয়দের দাবি,বাড়ির সামনে যেভাবে ছোট একটি জাম্বুরা গাছে ওই তরুণের মরদেহ ঝুলছিল তাতে সুনিশ্চিত বলা যায়, তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার (২০-সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১১ঃ৩০ মিনিটে নয়ন চন্দ্র রায় (১৫) এর ফাঁসিতে ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় তার পিতা হিরু রায়। এসময় তার চিৎকার চেঁচামেচিতে স্থানীয়দের ঘুম ভাঙ্গে। প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন হয়তোবা গ্রামে চোর ঢুকেছে। পরে কান্নাকাটি শুনে হিরুর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন নয়নের মরদেহ ফাঁসি থেকে নামানো হচ্ছে।

নয়নের মরদেহ ফাঁসি থেকে নামিয়ে স্বজনদের সহযোগিতায় মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক জানান, নয়ন মারা গিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতেই নয়নের পিতা বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন এবং তিনি দাবি করেন, তার ছেলেকে জমি ক্রয়কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা হত্যা করে লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছে।

নয়নের বাবার দাবি, তিনি একজন ভূমিহীন এবং দিনমজুর। নিজের জমি না থাকায় শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করছিলেন। খুব কষ্ট করে বাবা এবং ছেলে নয়ন মিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমিকের কাজ করে তাদের বাড়ির সামনে গত- ইউপি নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নেয়ামুল হক মন্ডলের চার শতাংশ জমি চারলক্ষ ৪০ হাজার টাকায় ক্রয়ের জন্য দাম নির্ধারণ করে তিনলক্ষ টাকা বায়না প্রদান করেন। কিন্তু অবশিষ্ট টাকা জোগাড় করতে না পারায় নেয়ামুল হক মন্ডল জমি দলিল করে না দিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর, ডিপি চন্দ্র নামে আরেক জনের কাছে জমি বিক্রি করেন।

নয়ন এবং হিরু তাদের বায়নাকৃত টাকা ফেরতের জন্য জমিক্রেতা ডিপির কাছে গেলে তিনি জানান, তিনি নেয়ামুল হক মন্ডলের কাছে জমির টাকা দিবেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। বাপ-বেটা বাড়িতে গিয়ে টাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে রাগারাগি করেন, এবং নয়ন ভাত না খেয়ে টাকা নেওয়ার জন্য মন্ডলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, গরীব মানুষ খুব কষ্ট করে জমি ক্রয়ের টাকা দিয়েছিলো। অন্যদিকে নেয়ামুল মন্ডল জমিটা অন্য জায়গায় বিক্রি করায় তারা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। এমন হতে পারে ছেলেটা টাকা ফেরত না পেয়ে অভিমানে আত্মহত্যা করতে পারে। হত্যা বা আত্মহত্যা যায় হউক নেয়ামুল হক মন্ডল টাকা ফেরত দিলে ছেলেটা বেঁচে থাকতো!

জমি বিক্রেতা নেয়ামুল হক মন্ডলের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করার কে! আমার ব্যক্তিগত বিষয় আমি দেখবো। টাকা দেবো না জমি দেবো পরে দেখা যাবে।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোস্ট মর্টেমের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা কি জানার চেষ্টা চলছে।