গোপন করা হয়েছিল গুলিবিদ্ধের ঘটনা!

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভারতীয় সীমান্তে গুলিবিদ্ধে গরু চোরাকারবারি মৃত্যু

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার একজন গরু চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সোমবার (৩ জুলাই) দিবাগত রাতে উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের সুকানি সীমান্ত এলাকায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধারের পর পরিবারের গোপন চিকিৎসাকালীন মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই গরু চোরাকারবারির নাম সুজন রানা (২৫)। তিনি দেবনগর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ডাঙ্গাপাড়া (আমজুয়ানি) গ্রামের মৃত আনারুলের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও দুটি ছেলে আছে।

সুজনকে কারা মেরেছে, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে সীমান্তবর্তী ওই এলাকার বাসিন্দারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কে অভিযুক্ত করছেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে সুজনের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। পরে খবর পেয়ে তেঁতুলিয়া থানা—পুলিশ বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর বুধবার (৫ জুলাই) সকালে লাশটির ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়না তদন্তের পর বুধবার বিকালে পারিবারিক কবরস্থানে লাশটি দাফন করা হয়।

দেবনগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আইবুল ইসলামকে একদিন আগে গুলিবিদ্ধের ঘটনা প্রকাশ না করার বিষয়ে জিজ্ঞাসায় তিনি কোন কিছুই বলেননি। তিনি বলেন, আমি লাশ নিয়ে ব্যস্ত আছি, যেহেতু সে আমার ওয়ার্ডের লোক।’

প্রথমে নিহত ব্যক্তির পরিবার গুলিবিদ্ধের বিষয়টি অস্বীকার করলে পরে জানান, সুজন আগে থেকেই ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতেন। সোমবার রাতে সুজনসহ পাঁচ—ছয়জনের একটি দল সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গরু আনতে যায়। সুজন রাতেই শিবচন্ডি শুকানি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আমরা জানতে পারলে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তাদের ধারণা সূত্রে জানা যায়, নিহত সুজন চুরি করে ফেরার পথে ভারতের মদনবাড়ি বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন। তাঁকে মারধরের একপর্যায়ে বিএসএফ সুজনকে গুলি করে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে এনে ফেলে চলে যায়। সেখানে সুজনকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেন। এরপর সুজনের পরিবারকে খবর দেন। সেখান থেকে সুজনকে উদ্ধার করে কোন এক হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া হলে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বিজিবি মাগুরমারী বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দারাজ উদ্দিন বলেছেন, ‘সুজন নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন, এটা নিশ্চিত। তবে তাঁকে কে মেরেছে বা কোথায় এই ঘটনা ঘটেছে, এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাতে তিনি গুলি খেয়েছেন আর মারা গেছেন মঙ্গলবার রাতে। তবে কোন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করা হয়েছে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্তের পর সঠিক ঘটনা বলা যাবে।’

দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছলেমান আলী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। ওই ওয়ার্ডের মেম্বার মঙ্গলবার রাতে আমাকে মুঠোফোনে বলেন ভাই চৌরাস্তা বাজারে একটি একসিডেন্ট হয়েছে। তাকে রংপুরে নেওয়ার পথে সে মারা গেছে। আপনাকে একটু আসতে হবে। এরপর আমি সরেজমিনে সুজনের বাড়িতে গিয়ে দেখি তার পেট গুলিবিদ্ধ এবং সেই ক্ষত স্থান বেন্ডিস করানো। তবে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়েছে তার কোনো ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) পাওয়া যায়নি’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নতুন চেয়ারম্যান হওয়ার জানতে পারি ওই এলাকায় ভারতীয় কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী রয়েছেন।’

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ওই ব্যক্তির বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। সুরতহালে লাশের শরীরে মারধরের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এ ছাড়া তাঁর তলপেটসহ আশপাশে একাধিক গুলির চিহ্ন আছে। তবে কার গুলিতে বা কীভাবে তিনি মারা গেছেন, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই বলা যাবে।’ নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি।