পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহালে মানববন্ধন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহালের জন্য মানববন্ধন সহ গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন মানববন্ধনকারীরা।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রায় শতাধিক বিক্ষুব্ধ এলাকাবসীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করা হয়।
জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত সালের ১৯ জানুয়ারিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন-২০২৩ নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সভাপতিত্বে গত সালের ২৩ জুলাই সভার কার্য্য বিবরণী বহিতে ৯সদস্যের আলোচনা সূচিতে ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থলে ভজনপুর শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেন এসএমসির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তাঁর প্রস্থাবে উপস্থিত সকল সদস্য সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করে ভজনপুর শব্দটি বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের নাম দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়। পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘হাসনাহেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ সংশোধিত হয়।

মানববন্ধনে তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে হাসনাহেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাখায় দফায় দফায় এলাকাবাসীর তুমুল প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

মানববন্ধনে দেবনগড় এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষক, প্রবীণ শিক্ষার্থীরা, অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী ও এলাকাবাসী তাদের নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরে নাম পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিজের ইচ্ছা মত নাম দিয়ে আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে অপমান করেছে। আমরা এর বিচার চাই এবং অবিলম্বে হাসনাহেনা নামটি পরিবর্তন করে দেবনগড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রাখার হুশিয়ারি জানানো হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে আরও ব্যাপক কর্মসূচী পালন করবে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

স্বারকলিপি সূত্রে জানা যায়, দেবনগড় একটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী এলাকা। এটি একটি প্রাচীন জনপথ। দেবনগড় নামে সাথে পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি গড়ের নাম যুক্ত আছে। সেন/খেন রাজবংশের (১৪৪০-১৪৬০) প্রতিষ্ঠাতা ও কামতার রাজা নীলধ্বজ সেন এবং শাহী রাজ বংশের (১৪৯৩-১৫১৯) প্রতিষ্ঠাতা ও মধ্যযুগে বাংলার শ্রেষ্ঠ শাসক আলাউদ্দীন হোসেন শাহের জন্মস্থান দেবনগড়ে।

সেই থেকে দেবনগড়ের নাম অনুসারে ১৯২১ সালেরও আগে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মূলত ভজনপুর ও দেবনগড় দুটি ভিন্ন ভিন্ন এলাকা। এদের পারস্পরিক দুরুত্বও প্রায় চার কিলোমিটার এবং এই দুই নামে দুটি ভিন্ন ইউনিয়ন হয়েছে। অন্যদিকে ভজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

এসময় মানববন্ধনকারীদের সাথে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল লতিফ তারিন ও কাজী আনিছুর রহমান।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- বীরমুক্তিযোদ্ধা আইবুল হক, প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য এম এ মতিন, মাঝিপাড়া মহিলা কলেজের প্রভাষক আবু তৈয়ব, দেবনগড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নজরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাফফর হোসেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রমূখ।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন-২০২৩ নীতিমালার ৭নং ক্রমিকের গ-এ ১১সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটির সুপারিশ হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সুপারিশ গৃহিত করার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় সদস্যের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলী বলেন, নাম সংশোধনে বিষয়ে তিনি কোনো কিছুই অবগত নন। নাম সংশোধনে উপজেলা কমিটির সদস্য হিসেবে কেউ তাকে কোনো কিছুই বলেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ ফজলে রাব্বি জানান, ‘বিদ্যালয়ের নাম সংশোধনের জন্য উপজেলা কমিটি রয়েছে। সরকার আপনাদের (এলাকাবাসীর) আবেগের বিরুদ্ধে না, আপনারা দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনর্বহালের দাবী জানিয়েছেন ফোন করে হলেও উর্ধ্বতন মহোদয়কে জানানো হবে এবং মিটিং এর মাধ্যমে এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।