পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলায় দায়সারা আয়োজন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলায় দায়সারা আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে। প্রদর্শনীতে পশু নিয়ে এসে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে অভিযোগ খামারিদের।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মাত্র এক মুঠো ঘাস আর এক কেজি ভুসি খাইয়ে পশুদের রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা। কেউ কেউ বাজার থেকে অতিরিক্ত খাবার কিনে এনে পশুকে খেতে দিয়েছেন।

এমনকি তাদের ভাগ্যেও মেলেনি মানসম্মত খাবার। খিদেয় কষ্ট পেয়েছে পশুরা। দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে খামারিদেরও। দিন শেষে তাদের ভাগ্যে মেলে দেড় শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা আর একটি করে প্লাস্টিকের বালতি বা গামলা।

আগে এমন প্রদর্শনী শেষে খামারিদের ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা করে যাতায়াত খরচ দেওয়া হলেও এবারের এমন অনিয়মে ক্ষুব্ধ খামারিরা। এই অনুষ্ঠানের জন্য প্রতি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।

খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার আয়োজনে শুরু থেকেই ছিল অব্যবস্থাপনা। স্টলগুলোতে ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় উন্নত জাতের গরুসহ পশুদের কষ্ট পোহাতে হয়।

৭ ঘণ্টায় সামান্য খাবার দেওয়ায় খামারিদের বাজার থেকে অতিরিক্ত খাবার কিনে এনে প্রাণীদের পেট ভরাতে হয়। ৫০টি স্টল থাকলেও অংশ নেন ৪৮ জন খামারি। আয়োজনে শুধু সদর ইউনিয়নের খামারিরাই অংশ নিয়েছেন।

অন্য ইউনিয়নগুলোর খামারিরা এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। বিকেলে প্রদর্শনী শেষে মহিষ খামারিদের ৩৫০ টাকা ও একটি বালতি, গরু খামারিদের ছোট—বড়ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ও একটি বালতি, ছাগল খামারিদের ২০০ টাকা ও একটি গামলা এবং মুরগি, কবুতর ও পাখি নিয়ে আসা খামারিদের ১৫০ টাকা ও একটি করে প্লাস্টিকের ছোট গামলা দেওয়া হয়েছে।

অথচ আগের বছরেই এমন প্রদর্শনী শেষে দেওয়া হয়েছিল ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা করে। মেলায় অংশ নেওয়া খামারি তারেকুল ইসলাম তমাল বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমাদের পশুদের জন্য মাত্র ৭০ টাকার খাবার দেওয়া হয়েছে। এক অঁাটি ঘাস আর এক কেজি ভুসি। অনেককে পুরস্কার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া প্রদর্শনী শেষে প্রতি খামারিকে পশু ও প্রাণিভেদে মাত্র ১৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর আগের বছর পেয়েছিলাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। প্রদর্শনী মেলায় অংশ নিয়ে সব খামারিই আনন্দের বদলে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

মেলায় অংশ নেওয়া খামারি আব্দুল মোমিন বলেন, এই খাদ্য দিয়ে কি একটা প্রাণীর পেট ভরে? আমরা বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খাওয়াতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া যে খাবার দিয়েছে, তা—ও নিম্নমানের। খাবারের সঙ্গে পানিও দেওয়া হয়নি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইউনুস আলীর কাছে এই আয়োজনে খামারিদের জন্য বরাদ্দ কত টাকা রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কোনো উত্তর না দিয়ে সটকে পড়েন।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাবুল হোসেন গণমাধ্যমকমীর্দের বলেন, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের প্রতি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী করার জন্য দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট আইটি বাদ দিয়ে তাদের ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে।

এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি গণমাধ্যমকমীর্দের জানান, মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো খামারিরা যেন গরু, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণীসম্পদ পালনে আগ্রহী হয়। সরকারের যে বিভিন্ন প্রণোদনা আসে এগুলো যেন তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারি তার জন্য এই মেলা। আমরা খামারিদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনলাম আমরা চেষ্টা করব এগুলো সমাধান করার।