রংপুরে কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও

রংপুরের মিঠাপুকুরে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করার পর হঠাৎ কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আবার কবে কাজ শুরু হবে আর কবে শেষ হবে এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। সঠিক সময়ে কাজ না করার কারণে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে দ্রুত কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।

সোমবার (১৪ আগস্ট) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (চঊউচ-৪) আওতায় সুপার স্ট্রাকচার, সাব স্ট্রাকচার ও অতিরিক্ত খরচের ব্যয় বাবদ মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৪৫১ টাকা ও গোকর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা। বিদ্যালয় দুটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনা কনস্ট্রাকশন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, প্রতিষ্ঠান দুটির নির্মাণকাজের মান নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকার সচেতন মহলের বিতর্কের সৃষ্টি হয়। নির্মাণকাজে নিম্নমানের বালু, ময়লাযুক্ত খোয়া ও দলাযুক্ত সিমেন্ট ব্যবহারে বাধা দেয় স্থানীয়রা। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ আমলে না নিয়ে কাজ করে যেতে থাকে ঠিকাদার। বিষয়টি নিয়ে পরে দুই প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে থাকা দুই উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন ও মো. ইব্রাহীম হোসেনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। উল্টো স্থানীয় লোকজনকে হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করে ঠিকাদারের নিজস্ব প্রতিনিধি রতন নামের এক ব্যক্তি নিম্নমানের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। এরপর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ঠিকাদারকে সঠিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। কিন্তু মাত্র দুদিন পরই ঠিকাদারের প্রতিনিধি রতন এসে কাউকে কিছু না জানিয়ে নির্মাণসামগ্রীর সব মালামালসহ মিস্ত্রিদের নিয়ে চলে যান।

স্থানীয়রা আরও জানায়, গত ৬ এপ্রিল গোকর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রেডবিম ঢালাইয়ের সময় সেখানে নিম্নমানের খোয়া ও জমাট বাধা সিমেন্ট দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ শুরু করা হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলীসহ শত শত এলাকাবাসীর সঙ্গে কাজের মান নিয়ে চরম বিরোধ সৃষ্টি হয় জেলা ও উপজেলা প্রকৌশলীদের। এরপর সেখানেও কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনা কন্ট্রাকশন।

এ ব্যাপারে চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকাল চলে এসেছে, খুব চিন্তায় আছি। এর মধ্যে অনিয়ম করে ঠিকাদারের লোকজন কাজ বন্ধ করে চলে গেছে। ওরা চলে যাওয়ার পর থেকে কেউ আর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। না ঠিকাদারের লোকজন, না প্রকৌশলীদের কেউ। খারাপ কাজের দায়ভার আমরা নেব কেন? চোখের সামনে নিম্নমানের কাজ তো করতে দিতে পারি না।

গোকর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, ঠিকাদারের প্রতিনিধি রতন সবকিছুতেই ক্ষমতা দেখায়। নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করলে সে এই বিদ্যালয়ের কাজ এখন হবে না বলে জানিয়ে চলে গেছে।

দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনা কন্ট্রাকশনের প্রোপাইটর নজরুল ইসলাম নলেজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি তাকে। এমনকি তার মন্তব্যের জন্য কাজের স্থানগুলোতে খুঁজেও দেখা মেলেনি তার।

এদিকে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে গোকর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবণ নির্মাণ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিঠানের সঙ্গে স্থানীয়দের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কাজ খারাপ হয়নি। আমরা দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।

আর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, যেটা প্যাটার্নে নেই, সে কাজ ঠিকাদার কীভাবে করবে? আমরা সবাইকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছি। দ্রুতই কাজ শুরু হবে।

বিদ্যালয় দুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হয় উপজেলা প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানের সঙ্গে।তিনি বলেন, বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে। অনেক শ্রমিক এখন পাটকাটা নিয়ে ব্যস্ত। এ জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুতই কাজ শুরু হবে, কোনো সমস্যা নেই।

ঠিকাদার ও স্থানীয়দের মধ্যে বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখা হবে, যাতে কারও মাঝে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝি না থাকে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে এবং কাজ শুরু হবে।