তেঁতুলিয়ায় গ্রামে গ্রামে বাড়ছে কচু ফুলের কদর

সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গ্রামে গ্রামে বাড়ছে কচু ফুলের কদর। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। জীববৈচিত্রের এক অপরূপ সৌন্দর্যে নিহিত রয়েছে এ পৃথিবী। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টির মাঝে এমন কোন সৃষ্টি নেই যা মানুষের কল্যাণে প্রতিফলিত না হয়। কচু সবচেয়ে অবহেলিত উদ্ভিদ। মানব কল্যানের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে সমস্ত জীববৈচিত্র, তেমনি বাহারি রকমের শাক সবজির মধ্যে আবহমানকাল থেকেই কচু সবার জনপ্রিয়। অবহেলিত এই অর্থে, কোন রকম যতœ-আত্তি ছাড়াই একটু পানি আর স্যাঁতস্যাঁতে মাটি পেলেই সে জন্মাবে। তবে তার মানেই তার কোন গুণ নেই তা কিন্তু একদম ভুল। এর পুষ্টিগুণ জগৎ বিখ্যাত। এর সব কিছুই নানা কাজে লাগে- কচুর লতি, মূল, পাতা, ফুল। তেঁতুলিয়ায় গ্রামের মানুষ এই ফুলকে চিনেন ঢোঢু হিসেবে। তবে এই ফুল তেমন পরিচিত নয়। যদিও ফুল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তবে যারা গ্রামে থাকছেন তারা অনেকেই চেনেন এই ফুলটি। বছরের এই সময়টায় দেখা যায় কচুর ফুল। সবজি হিসেবে কচু ভীষণ প্রিয় খাবার সবার। কচুর প্রায় সব কিছুই খাওয়া যায়, কচু শাক, কচুর গোড়া, লতি, কচুর গাট বা কচুর মুখি অথবা কচুর ফুল। কচু বা কচু ফুল অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কচু দেখতে পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, বিভিন্ন পতিত জমিতে অনাদরে-অবহেলায় অনেক সময় কচু হয়ে থাকতে দেখা যায়। বহু জাতের কচু রয়েছে। কিছু কিছু জাতের কচু রীতিমত যতেœর সাথে চাষ করতে হয়।

বনে জঙ্গলে যেসব কচু আপনাআপনি জন্মায় সেগুলকে সাধারণত বুনো কচু বলা হয়। এরা সবগুলো মানুষের খাবারের উপযোগী নয়। খাবার উপযোগী জাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে মুখীকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, পাইদনাইল, ওলকচু, দুধকচু, মানকচু, শোলাকচু ইত্যাদি। সবজি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও সৌন্দর্যের কারণে কিছু কিছু প্রজাতির কচু টবে ও বাগানে চাষ করা হয়। এদের মধ্যে কতগুলোর রয়েছে বেশ বাহারী পাতা, আবার কতগুলোর রয়েছে অত্যন্ত সুন্দর ফুল। রান্নার কিছু না থাকলে শাশুড়ি পুত্রবধূকে অথবা মা মেয়েকে এমনকি স্বামী তার স্ত্রীকে কই আরে চিন্তা নাই আজ কচুর ফুলের শাক রান্না করলেই চলবে পারলে সাথে একটু ডাল। এখন নতুন প্রজন্মের অনেকেই কচুর ফুলের শাক চিনে না। গ্রামবাংলার প্রত্যেক মানুষ এই শাক বেশি পছন্দ করে কারণ এই শাক খেতে খুব সুস্বাদু।

অনুমান করা হয়, কচুর উৎপত্তি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। প্রায় দু’হাজার বছর আগেও কচুর চাষ হত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্থলভূমি ও জনভূমি উভয় স্থানে কচু জন্মাতে পারে। তবে স্থলভাগে জন্মানো কচুর সংখ্যাই বেশি। প্রজাতিভেদে কচু ফুল কচুর মুল, শিকড় বা লতি, পাতা ও ডাটা সবই মানুষের খাদ্য। খাদ্য হিসেবে কচুর ফুলে ভিটামিন, খনিজ লবন, আয়রন ও জিংক প্রচুর পরিমানে রয়েছে। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও কচুর বহু আয়ূর্বেদীয় গুনাগুন আছে বলে দাবি করা হয়।

কচুর এই ফুল শাক রান্নায়িত উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কালদাসপাড়া গ্রামের সবুরা ও মুনিরা বেগম বলেন, তাঁরা যখন যে শাকের প্রচলন আসে তখন সেই শাকের স্বাদ গ্রহন করেন। বর্তমানে পুকুরে, খালে কিংবা ডাঙায় আপনা আপনি জন্মানো কচুর ফুল দেখা দিয়েছে তাই তারা কচুর ফুল রান্না করে পরিবার মিলিয়ে এক দু’বেলা ভাতের সঙ্গে এই শাক খেয়ে থাকেন। তাঁরা আরোও বলেন, সুস্বাদু এই শাকের প্রচলন আগের তুলনায় খুব কম। তাদের ধারণা, পাড়া মহল্লায় কারো শরীর ফুলে গেলে কিংবা রক্ত শুণ্যতা দেখা দিলে ডাক্তাররা কচু শাক খেতে বলেন। তাই তাঁরা কচু শাক, কচুর গোড়া, লতি, কচুর গাট বা কচুর মুখির সঙ্গে ফুলকেও শাক হিসেবে কদর করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাক ও সবজি রোগ প্রতিরোধক খাবার হিসেবে কাজ করে। কচু শাকের সব চেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কচু শাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচুশাক খেতে পারেন। তাছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।