পঞ্চগড়ে গ্রাম আদালতের এজলাসে বসে কৃষকলীগ নেতার মতবিনিময় সভা, জানেন না চেয়ারম্যান

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের এজলাসে বসে কৃষকলীগ নেতার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে সভার বিষয়ে অবগত নই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। গ্রাম আদালতের এজলাসে বসে মতবিনিময় সভা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।

গত সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের গ্রাম আদালত হলরুম কক্ষে বর্তমান দলের কতিপয় নবাগত ও পুরোনো স্থানীয় নেতা কর্মীদের আয়োজনে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল লতিফ তারিনের নেতৃত্বে এই মতবিনিময় সভা করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি আসির উদ্দিন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সোহেল রানা, বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাধারন সম্পাদক শাকিল সম্রাট, সাজেদুল ইসলাম, জাকের, ইউপি সদস্য আতাউর রহমান, ইউপি সদস্য তারিফ হোসেন প্রধান, ইউপি সদস্য আইবুল হক, ইউপি সদস্য নুর জামান, সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সহ আরো অনেকেই।

ইউপি সদস্য আতাউর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে এজলাসে বসে আলোচনা করা হলে তিনি বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবগত করেন। আপনারা এজলাসের নিচে বসলেন আর আপনাদের সম্মানের তুলনায় যারা কমতি রয়েছে বা অল্প বয়সের তাঁরাই উপরে বসলেন এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, আপনি তো জানেন ওরা নেতা মানুষ আর আমরা পরিষদের মেম্বার। তবে এজলাসে বসে এ ধরণের আলোচনা করা তিনি এজলাসকে অবমাননার সাথে তুলনা করেন।’

গ্রাম আদালতের এজলাসে মতবিনিময় সভায় বসার জন্য গ্রাম আদালত হলরুমের তালা কে কখন কার অনুমতিতে খুলছেন এমন প্রশ্ন প্রথমে দাফাদার মনসুর আলমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আকবর চৌকিদার চেয়ারম্যানের কথা বলে তাঁর বাড়ি থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে তালা খুলে দিয়েছেন।

এরপর আকবর আলীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সাবেক আসির মেম্বার ও সাজেদুল ইসলাম নবনির্বাচিত এমপির বোন আসার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে তালা খোলার জন্য চাবি নিয়ে আসতে বলেন। ওই সময় আমার পার্শ্বে মনসুরও ছিল। পরে মনসুর দাফাদার চাবি আনতে বললে গ্রাম পুলিশ আকবর চাবি নিয়ে এসে গ্রাম আদালত হলরুমের তালা খুলে দেন। তবে দু’জনের কেউ চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে অবগত করেননি বলে জানা গেছে।

এদিকে আব্দুল লতিফ তারিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মেহমান হিসেবে গিয়েছি। এখন তাঁরা যদি আমাকে বসতে দেয়, তবেই তো বসেছি। সেটি কোনো রাজনৈতিক আলোচনা ছিলনা এমপির উদ্দেশ্যে মতবিনিময় সভার আয়োজন ছিল। তিনি আরোও বলেন, আমি এজলাসে বসার বিষয়ে যদি চেয়ারম্যান না জেনে থাকে তাহলে পরিষদের লোকজন কেন তালা খুলে দিলেন? এটা তাদের ব্যর্থতা। আমি তো চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসিনি, বসলে একটা কথা ছিল।’

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তারেক হোসেন বলেন, ‘তাকে এ বিষয়ে কেউ অবগত করেননি। পরে ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জানতে পারলে বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি বলেন, যে গ্রাম আদালতের এজলাসে বসে তিনি বিচারিক কার্যক্রম করেন, সেই এজলাসে বসে মিটিং করা যুক্তিসঙ্গত হইতে পারেনা। মতবিনিময় সভায় আপনার চেয়ারে কেউ বসেনি জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, সামনে দু’পাশে দুটি কাঠগড়া রেখে আর চেয়ার সরিয়ে দিয়ে মিটিং করা যুক্তিকতা হতে পারেনা।

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহবুবুল হাসান বলেন, গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ এ নিদির্ষ্ট ধারায় একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিচারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গ্রাম আদালতে এজলাসে বসে কোনো মিটিং করা ঠিক হবেনা। একজনের নির্ধারিত দায়িত্বরত চেয়ারে অন্য কেউ বসতে পারেনা চলমান রীতি। তবে দায়িত্বরত ব্যক্তি যার অধিনে ওই ব্যক্তি সেই চেয়ারে বসতে পারে। ইউপি চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করলে, যিনি এজলাসে বসে এ ধরণের মিটিং করেছেন আমরা আইনগতভাবে তাঁর কাছ থেকে জবাব চাইবো।