পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভিডব্লিউবি চুড়ান্ত তালিকা জালিয়াতি, চাল দেওয়া হয়নি জোসনা বানুকে

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) চুড়ান্ত তালিকা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। চুড়ান্ত তালিকায় নাম প্রকাশ পেলেও ভিডব্লিউবি’র চাল দেয়া হয়নি লিখিত অভিযোগ করেছেন জোসনা বানু। গত সোমবার (২৯ মে) উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ভিডব্লিউবি কমিটির সভাপতি বরাবরে এই লিখিত অভিযোগটি করা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৩-২০২৪ ভিডব্লিউবি চক্রের আওতায় দুই হাজার ৫৬৭ জন মহিলা এ সুফল ভোগ করছেন। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিজন মহিলা তাদের পরিবারের জন্য মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি হারে চাল পেয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নে ৪৬৪ জন মহিলা এই ভিডব্লিউবি কার্ড পেয়েছেন। উপজেলা কমিটি কর্তৃক ওই ইউনিয়নে ২০২৩-২০২৪ চক্রে ভিডব্লিউবি উপকারভোগীদের নামের চুড়ান্ত তালিকা ৩(ক) এ প্রকাশ করা হয়। পরে ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শেখগছ গ্রামের ওয়াহিদুলের স্ত্রী জোসনা বানুর নাম চুড়ান্ত তালিকার ১৭নং ক্রমিকে প্রকাশ পাই।

সরে জমিনে গিয়ে আরোও জানা যায়, জোসনা বানুর নাম প্রকাশের পর ৭নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ তাকে একাউন্ট খোলার জন্য খবর দেয়। এরপর জোসনা বানু ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে চলতি বছরের গত এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখ একটি একাউন্ট খুলেন। একাউন্ট খোলার পর ইউনিয়ন পরিষদে গত মে মাসের ১৫ তারিখ ৬,৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড চাল বিতরণ করা হলে ওই দিন জোসনা বানুকে চাল না দিয়ে ৬নং ওয়ার্ডের চুড়ান্ত তালিকা জালিয়াতি করে খাটিয়াগছ গ্রামের মোস্তফার স্ত্রী মজিতাকে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে জোসনা বানু চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে বলতে গেলে তাঁরা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যার সুপারিশে নামটি তালিকায় এসেছেন তার কাছে যাইতে বলেন। এদিকে জোসনা বানু দু’চোখে অশ্রæ ফেলিয়ে বাড়িতে ফেরত চলে আসেন। ওই দিন সারদিনে মাস্টাররোল ঠিক থাকলে রাতারাতি মাস্টাররোল পরিবর্তন দেখিয়ে ৭নং ওয়ার্ডে ৪৪ জন উপকারভোগীর স্থলে ৪৩ জন এবং ৬নং ওয়ার্ডে ৬৮জন উপকারভোগীর স্থলে ৬৯জন দেখানো হয়েছে। এরপর গত মে মাসের ২৮ তারিখ ভিডব্লিউবি চাল বিতরণ করা হলে সে দিন মজিতার কাছে চাল বিতরণ না করে পরিষদে জমা রাখা হয়েছে। ওই দিনও বিতরণকৃত মাস্টাররোল ৪৪জন এর স্থলে ৪৩জন এবং ৬৮ জনের স্থলে ৬৯জন দেখানো হয়েছে।

অভিযোগকারী জোসনা বানু বলেন, ‘আমি স্যার খুবই গরিব, আমি কষ্ট করে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে ৮হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি আমাকে কার্ড করেও দিয়েছেন। পরিষদের চাল তুলতে গেলে মেম্বার চেয়ারম্যানরা আমাকে চাল দেয়নি। তাঁরা বলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানই নাকি কার্ডটি কেটে দিয়েছেন।’

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওবায়দুল হক বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের তালিকায় জোসনা বানুর নাম ছিল। পরে সেটি কেটে ৬নং ওয়ার্ডের মজিতা নামের একজনকে দিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের মেম্বার। কিভাবে নামটি সংশোধন করলেন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, উনি নাকি অফিস থেকে সংশোধন করেছেন এখন কতটুকু কি তা আমি বলতে পারছিনা।’

৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সুপারিশ ছিল মজিতার ক্ষেত্রে। আমি জোসনা বানুকে চিনিনা। আমার ওয়ার্ডে ৬৯টি কার্ড হওয়ার কথা চুড়ান্ত তালিকায় দেখি একটি কার্ড নেই, খোঁজ নিয়ে দেখলাম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমার কার্ডটি জোসনা বানুকে দিয়েছেন। এরপর আমি অফিসে গিয়ে আমার ওয়ার্ডের তালিকা সংশোধন করেছি তারপর মজিতাকে চাল দিয়েছি। তালিকাটি সংশোধন করা হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, হ্যাঁ অফিস থেকে সংশোধন করা হয়েছে।’

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানিনা। মোজাফফর মেম্বার বলছেন এই কার্ডটি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানও জোসনা বানুকে দিয়েছিলেন পরে তিনিই নাকি কার্ডটি কেটে মজিতাকে দিয়েছেন। তিনি সংশোধনের একটি তালিকাও জমা দিয়েছেন।’

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া টাকার বিষয়টি অ¯^ীকার করে বলেন, ‘ওই মহিলা আমার কাছে আসছিলেন, আমি তাকে সুপারিশও করেছি। পরে মোজাফফর মেম্বার ও আমার সুপারিশকৃত কার্ড বাদ পড়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে মোজাফফ মেম্বার আমার কাছে আসলে আমি মহিলা বিষয়ক অফিসে জোসনা বানুকে চাল না দিয়ে মজিতাকে দিতে বলছি।’

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা করুনা কান্ত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জোসনা বানুর নামই চুড়ান্ত তালিকায় রয়েছেন। এটি বাদ দিতে গেলে কারণ দর্শানোর বিষয় উপস্থাপন পূর্বক ইউনিয়ন পরিষদের সম্মতি সাপেক্ষে এবং ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে বসে সংশোধন করতে হবে। সংশোধন না করেই মজিতাকে চাল দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপতত ওই চালটি বিতরণ যেন না করা হয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ভিডব্লিউবি কমিটির সভাপতি সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত রয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’