চুয়াডাঙ্গার চোখ ছলছল নিয়েই নিত্যপণ্যের বাজারে ভোক্তারা

চুয়াডাঙ্গায় হঠ্যাৎ কি-আর সময় নিয়েই কি। যখন তখন নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লাগছে। আর সে আগুনে প্রতিনিয়ত পুড়ছে গরীব, নি¤œবৃত্ত ও মধ্যবৃত্তরা।

তারপরও কোনো প্রতিকার নেই সরকারের পক্ষ থেকে।
এদিকে, বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত থাকলেও ব্যবসায়ীদের কূটকৌশলে পেরে উঠছে না ভোক্তা অধিকার, বাজার মনিটরিং কমিটি, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো। কোনো মতেই যেন বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না তারা।

আর সে কারণেই গরীব, নি¤œ ও মধ্যবৃত্তদের সংসার চালানো ভয়াবহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ তাদের ভোটে সরকারের চেয়ার উপহার দিলেও তাদের প্রতি কোনো খেয়াল নেই বললেই চলে। যদি খেয়ালটাকে খেয়ালেই রাখা হতো তাহলে অবশ্যই গরীব, নি¤œ ও মধ্যবৃত্তদের নাগালের বাইরে যেতো না বাজার নিয়ন্ত্রণ।

সাধারণ জনগণের চাপা ক্ষোভ আর দুঃশ্চিন্তার প্রহর গুনতে হতো না আর। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের ওপর কোনো প্রকার চিন্তা নেই বলেই চলে। তাই চুয়াডাঙ্গার বড়বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই বাড়িয়ে ফেলছে চাল, তেল, ডিম, মাছ মাংস, শাকসবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। বাজার ঘুরে যেটা দেখা গেছে। নিত্যপণ্যের বেশির ভাগই জিনিসের দামে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০-৩০ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যার বেশিরভাগ পণ্য চুয়াডাঙ্গাতেই চাষাবাদ হয়ে থাকে।

এভাবে চলতে থাকলে খুব বেশি সময় নয় অল্পসময়ের মধ্যে গরীব নিন্ম ও মধ্যবিত্তদের পথে পথে আন্দোলন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলেও অনেকের সাথে কথা বলে তা বোঝা গেছে। তাই তারা যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালানো দুস্কর হয়ে পড়েছে। দিন যাচ্ছে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তেই আছে। কিন্তু আয় তো কারো বাড়ছে না। যার কারণে সন্তানদের ঠিকমত লেখাপড়ার খরচ চালাতে একপ্রকার বাড়তি চাপা কষ্ট নেমে এসেছে প্রতিটি অভিভাবকদের।

এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার কাছে কীভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন সফল হতে পারে সরকার-সেটা এখন জনগণের কাছে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ওপর সরকারের নামমাত্র ভ্রæক্ষেপ থাকায় ব্যবসায়ীরা কোনো প্রকার ভয় পাচ্ছে না। যার কারণ কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন “আমরা ব্যবসায়ীদের পাশে পাছি” তাহলে এটা ব্যবসায়ীরা সাহস জোগানোর কথা নয় কী? আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জনগণের কাছ থেকে কিভাবে বাড়তি লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা সেই মহোৎসবে মেতে উঠেছে।

চুয়াডাঙ্গার গরীব, নিন্ম ও মধ্যবৃত্তদের মাঝে ক্ষোভ আর দুঃখ বেদনা ভরা ছাড়া আর কিছুই নেই। অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তার ছোটখাটো ব্যবসা চাকরী করে সংসার চালায়। বর্তমানে ব্যবসার পরিস্থিতি যেমন খারাপ তেমনী বাজারে নিত্যপণ্যের বেশিরভাগ জিনিসের দামই ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে আগে থেকেই। আবার যারা চাকরী করেন তারাও পড়েছেন বিপাকে।

বেতন নির্ধারিত থাকলেও নিত্যপণ্যের দামে স্থায়িত্ব নেই। যখন তখনই বেড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম। তারপরও সরকার বড় বড় ব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক দল দিলে চেয়ার ঠিক রাখাই বড় কার্যক্রম। কিন্তু দেশের গরীব নিন্মবৃত্ত ও মধ্যবিত্তরা কেমন আছে তার খবর রাখবে কে? এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে? নিশ্চয় সব ঘাত প্রতিঘাট সরকারের ওপরই স্বাভাবিকভাবেই তা বর্তায়।
বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে বাজারে যেতে ভয় পায় ভোক্তারা। কখন যেন ব্যবসায়ীরা বলে ফেলে চালের দাম ডিমের দাম তেলের দাম বেড়ে গেছে।

এখানে লক্ষ্য করেও বার বার দেখা গেছে, যে জিনিস সংসারের জন্য বেশি প্রয়োজন সেসকল পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত ব্যবসায়ীরা। তাহলেও কী এটা ইচ্ছা করে করা ছাড়া কখনও কী কখনও হওয়ার কথা নয়। আর এভাবেই ব্যবসায়ী নীতিকে উপেক্ষার অপরাধে সংশ্লিষ্ট অভিযান চালিয়ে জরিমানায় সীমাবদ্ধতায় রাখা হয়েছে। যেহেতু বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সেহেতু ব্যবসায়ীদের জব্দ করতে হলে বড় জরিমানার পাশাপাশি ন্যূনতম ১০ বছরের জেলের ব্যবস্থা করলে হয়তো খুব অল্পসময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যবসায়ীনীতি ফিরে আসবে। আরেকদিকে ভোক্তাগণ খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবে। মানুষ উন্নয়ন চায় তবে আগে নিত্যপণ্যের বাজারসহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম গরীব, নি¤œ ও মধ্যবৃত্তদের হাতের নাগালে চায়।

আসলে দেশের ঊর্ধ্বতনদের চেহারাই পাল্টে গেছে। এখন যার মাথায় তেল আছে তার দিকেই সবাই থাকিয়ে থাকে। আর এমনই অবস্থা তৈরী হয়েছে সমাজে। সেইসাথে সরকারের অবস্থাও তেমনই দেখা যাচ্ছে বলে সাধারণ জনগণের কাছে এখন তা পরিস্কার হয়ে উঠেছে।
সামনে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার বাজারের নজর হারাবে বলেও মনে করছে সচেতন জনগণ। আর এ কারণে ওইসকল গরীব, নি¤œবৃত্ত ও মধ্যবৃত্তদের নিত্যপণ্যের বাজারে ঢোকার পথে বেড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে উচ্চমূল্য। সেদিকে, লক্ষ্য রেখে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে জনগণের কথা ভেবে গরীব, নি¤œ ও মধ্যবৃত্তদের বাঁচার সুযোগ করে দেয়ায় এখন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে রিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ছোটখাটো চারকী করেন। তিনি যা বেতন পান তা দিয়ে বর্তমানে চড়ামূল্যের বাজারে আমাদের মরার মত অবস্থা তৈরী হয়েছে।

সবুজ নামের একজন বলেন, আমি একজন পাড়ামহল্লার ছোটখাটো নি¤œমানের ব্যবসায়ী। গত সপ্তাহে বাজার করেছি কম ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে শাকসবজি, মাছ, মাংসসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। যে পরিমাণ টাকা নিয়ে এসেছিলাম পুরোপুরি বাজার করতে পারিনি।