চুয়াডাঙ্গায় সৌখিন ভিক্ষুক রহিমের ‘রাজসিংহাসন’

দুনিয়ার বুকে স্বপ্ন দেখেনা এমন মানুষ পাওয়া বড়ই মুশকিল ব্যাপার। স্বপ্ন কম আর বেশি থাকে সবারই। তবে কারো থাকে টাকার কারো থাকে বাড়ি বানানোর নেশা। কিন্তু টাকা ছাড়া বাড়ী বানানো অসম্ভব ব্যাপার হওয়ায় সবার স্বপ্নও পূরণ হয়না বাড়ি বানানো। যার টাকা আছে তার একতলা দোতলা পাঁচতলা বা তদুর্ধ্ব বাড়ি বানাতে হলে রাজমিস্ত্রীর সহযোগিতায় বানায় সবাই। পরে বসবাসের স্থান গড়ে তোলে।

কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় রহিম (৬০) নামের এক ভিক্ষুকের স্বপ্ন ছিল পাকা ঘরে বসবাস করার। তাই চুয়াডাঙ্গা—দর্শনা মহাসড়কের পাশে সরকারী জমিতে স্বপ্ন এঁকেছেন তিনি। দেখে পরিত্যাক্ত ঘর মনে হলেও আসলেই এই দোতলা ঘরটি পরিত্যাক্ত নয়। এই ঘরটি প্রতিটি মানুষের মত রহিমের কাছে ‘রাজার সিংহাসন’।

রহিম চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কাঁদিপুর গ্রামের মৃত কিয়ামদ্দিনের ছেলে।

এলাকাবাসীর মতে রহিম মানসিক ভারসাম্যহীন ও দরিদ্র হওয়ায় তাকে মেয়েসহ ছেড়ে চলে যান স্ত্রী। কিন্তু সেই থেকে তার মনে স্বপ্ন জাগে পাকা ঘর বানানোর প্রতিজ্ঞা। পিতা—মাতার কথা না শুনে গত ২০০০ সাল থেকে ২০ বছর ধরে কোনো রাজমিস্ত্রি ছাড়াই তিলে তিলে নিজ হাতেই ‘রাজসিংহাসন’ নির্মাণ করেছেন তিনি। সেই ঘরের নিচে ২টি কক্ষ ও দোতলায় রয়েছে ২টি কক্ষ। নিচতলায় ঘরের মেঝের দেয়ালেও লাগিয়েছেন টাইলস। শোবার ঘরের কক্ষে বারান্দায় বানিয়েছেন টাইলস মোড়ানো রান্না করা চুলা।

রহিম প্রতিদিন ভিক্ষার টাকা দিয়ে অল্প অল্প করে সিমেন্ট বালি কিনে নিজ হাতে একটু একটু করে গাঁথুনি শুরু করেন তিনি।
ওই ঘরে বিলাসিতাদের মত দামী দামী জিনিসপত্র না থাকলেও সাধারণের মত তার ঘরে রয়েছে একটি কাঁচের তৈরী শোকেজ। সেই শোকেজে রয়েছে ভিক্ষা করা লুঙ্গি গামছাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে টাইলস দিয়ে মোড়ানো চুলায় রান্না করেন তিনি। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তার স্মৃতি নিয়ে কোনো রকম আলু ভর্তা আর সবজি ভাত খেয়ে কোনো রকম একা একাই জীবন পারছেন তিনি।

সরকারী জমির ওপর নির্মিত রহিমের ‘রাজসিংহাসন’ বিভিন্ন সময় সড়ক বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে তিনি দোতালায় উঠে পড়তেন। নামাতে পারাতো না কেউ।
এদিকে, স্থানীয়রা বলছেন স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই এইভাবে জীবনযাপন করছেন তিনি।

এবিষয়ে রহিম বক্স বলেন, তিনি ভিক্ষা করে গত ২০ বছর ধরে একটু একটু করে পাঁকা ঘর নির্মাণ করেছেন। তার স্বপ্ন ছিল পাকা ঘর তৈরী করা। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন স্ত্রীর স্মৃতি নিয়ে এখানেই বসবাস করে জীবনের বাকীটা সময় কাটিয়ে দিতে চান রহিম।

এ বিষয়ে হাউলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) নিজাম উদ্দিন বলেন, সড়ক বিভাগের বার বার উচ্ছেদ অভিযান হলেও প্রাণহানি এড়াতে দোতলায় উঠে বসে থাকতেন তিনি। চেয়ারম্যান আরও বলেন, কেউ তাকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা বললে রহিম বক্স বলেন, আমি এখানে থাকবো কারো কিছু করার নেই। আমি আমার স্ত্রীর স্মৃতি নিয়েই এখানে জীবন পার করে দেব। তবে স্থানীয়রাও চায় বাড়িটি যেন না ভাঙা হয়।