পঞ্চগড় করতোয়া নদীতে

জলে ডুবে পাথর তুলে একমাত্র জীবিকা অবলম্বন যাদের

পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে জলে ডুবে পাথর তুলে একমাত্র জীবিকার শ্রম অবলম্বন করে জীবন যাদের। কয়েক মিনিট পর পর নদীর জলে ডুবে পাথর তুলেন কাবুল শেখ। পাথর তোলা সরঞ্জাম নিয়ে সকাল সকাল ছুটে আসেন নদীতে পাথর তুলতে সঙ্গে আরো দুজন। সারাদিন জলে ডুবে ডুবে পাথর তুলে হাতে আসে মাত্র ২শ থেকে তিনশত টাকা। এই নিয়েই চলছে টানাপোড়নের সংসার জীবন। এক সময়ের পাথরের রাজত্বে কাজ করে যেখানে দৈনন্দিন শ্রমের মূল্য আসতো হাজার থেকে দু’হাজার টাকা। এখন মাত্র দু’তিনশো টাকাতেই চলছে কষ্টজীর্ণ সংসার।

এ চিত্র পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের পাথরঘাটা এলাকার প্রবাহিত করতোয়া নদীর শ্রম জীবিদের আর্তনাদ।

এদিকে পাথরের রাজত্ব বলা হয়ে থাকে ভজনপুর। এলাকায় এসময় টনকে টন পাথর রপ্তানী হয়েছে বিগত বছর গুলোতে। পরিবেশ ধ্বংসাত্মক যন্ত্র ড্রেজার মেশিনে উত্তোলিত হতো এ পাথর। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনে উত্তোলন করে একশ্রেণি সুবিধাবাদী ব্যক্তি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠলেও ভাগ্য খুলেনি সাধারণ দিনমজুর শ্রমিকদের।

জেলায় পুলিশ সুপার মুহম্মদ ইউসুফ আলী যোগদানের পর থেকে অবৈধভাবে ধ্বংসাত্মক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেন। প্রকৃতি রক্ষা পেলেও কৃষি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এখানকার ভূমি তাতে করে চরম দারিদ্রতার দিন গুনতে হচ্ছে এ এলাকার হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। এই বেকার শ্রমিকদের মধ্যে কাবুল শেখ, সোলেমান ও বয়রুদ্দিন।

উপজেলার ভজনপুরে প্রবাহিত নদী করতোয়া নিজবাড়ি, পাথরঘাটা, আঠারখাড়ি, শেখগছ, ময়নাগুড়ী ও কাকপাড়া, ভেলকুপাড়া ও বোদাপাড়া হয়ে জেলায় প্রবেশ করেছে। ড্রেজার মেশিনের পাথর সাইট বন্ধ থাকায় এ নদী থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক।

নদীটি ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ডুবে ডুবে পাথর তুলছে কাবুল শেখ, মোখলেসুর, কামালসহ ৫/৮ জনের দলবাঁধা শ্রমিক। এদের কোন কোন দলকে দেখা যায় বালু তুলতে। তারা নৌকায় বালু জমা করে তীরে এনে স্তূপ করছে। এ নদীতে শতাধিকের বেশি নৌকা রয়েছে বলে জানা গেছে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে।

পাথরঘাটা গ্রামের পাথর শ্রমিক কাবুল শেখ জানান, ভাই পাথরের সাইট বন্ধ। সকাল সকাল এ নদীতে নেমে পড়ি। বুকগলা পানিতে ডুবে ডুবে পাথর তুলি। সারাদিনে পাথর তুলে মহাজনের কাছে বিক্রি করে দুইশো থেকে তিনশো টাকা মুজুরী জুটে। এটা নিয়েই চলছে আমার কষ্টের সংসার।

আইনুল হকসহ কয়েকজন বালু শ্রমিক জানান, আমরা দিনে ৮ জন মিলে নদী থেকে ৫শ সিএফটি বালু তুলতে পারি। এই ৫শ সিএফটি বালুর দাম পড়ে ২ হাজার টাকা। তা জনে মিলে আড়াইশো টাকা। এ টাকায় সংসার চলছে না অন্য কোন কাজ নাই যে করবো খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এ অঞ্চলের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও নারী পাথর শ্রমে জড়িত। কৃষির উপযোগী জমি না থাকায় একমাত্র পাথর উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। পুরুষরা পাথর তুলেন, নারীরা সেই উত্তোলিত পাথর বাছাই ও মেশিনে ভাঙ্গানোর কাজ করেন।

গত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর হতে বন্ধ রয়েছে ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলন। কাজ না থাকায় শ্রমিকদের খেয়ে-না খেয়েও দিন অতিবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক শ্রমিক। শ্রম নির্ভর কোন কল কারখানা না থাকায় কাজের অভাবে না খেয়ে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের মৌলিকা চাহিদা পূরণে ভীষণ হিমছিম খেতে হচ্ছে তাদের। তার মধ্যে গত বছর মার্চ থেকে মহামারী করোনা ভাইরাস প্রকোপে লকডাউনসহ চলমান বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কারণে চরম দারিদ্রতার মুখোমুখিতে এ অঞ্চলের সাধারণ শ্রমিকরা।
তাদের দাবি এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সনাতন পদ্ধতিতে হলেও পাথর উত্তোলনের সুযোগ চায় তারা।